
সহজ জয়ের পথে তখন পাকিস্তান। ৬ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ পাঁচ ওভারে প্রয়োজন ২৯ রান। কিন্তু পরের তিন ওভারে তারা হারিয়ে ফেলল তিন ব্যাটসম্যানকে। ম্যাচে ফিরল উত্তেজনা। শেষ পর্যন্ত খুব নাটকীয় কিছু যদিও হলো না। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল পাকিস্তান।
১৭ বছর পর ফয়সালাবাদে আন্তর্জাতিক ম্যাচ ফেরার উপলক্ষ ও শাহিন শাহ আফ্রিদির ওয়ানডে অধিনায়কত্বের অভিষেক রাঙাল পাকিস্তান। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে স্বাগতিকরা জিতল ২ উইকেটে।
ইকবাল স্টেডিয়ামে মন্থর উইকেটে ২৬৪ রানের লক্ষ্য আফ্রিদির দল ছুঁয়ে ফেলে ২ বল বাকি থাকতে।
দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহটা আরও বড় হতে পারত, ৩৩ ওভারে রান ছিল ৩ উইকেটে ১৯১। তাদের দৃষ্টি তখন তিনশ বা এর বেশিতে। কিন্তু সেখান থেকে ব্যাটিং ধসে ৩৭ রানের মধ্যে তারা হারিয়ে ফেলে ৫ উইকেট।
সফরকারীদের দুই ওপেনার লুয়ান-ড্রে প্রিটোরিয়াস করেন ৬০ বলে ৫৭ রান, কুইন্টন ডি কক করেন ৭১ বলে ৬৩।
রান তাড়ায় পাকিস্তানের হয়েও ফিফটি করেন দুজন। ফাখার জামান ও সাইম আইয়ুব দলকে ভালো শুরু এনে দেওয়ার পর চারে নেমে ৭৪ বলে ৫৫ রান করেন নেতৃত্ব হারানো মোহাম্মদ রিজওয়ান, পাঁচ নম্বরে সালমান আলি আগা করেন ৭১ বলে ৬২। ম্যাচ-সেরার স্বীকৃতিও পান সালমান।
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ওয়ানডে অভিষেক হয় এদিন তিন জনের। তাদেরই একজন প্রিটোরিয়াসের ব্যাটে শুরুটা দারুণ করে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা দলটি। প্রথম ১০ ওভারে আসে বিনা উইকেটে ৬২ রান, যেখানে প্রিটোরিয়াসের একার রান ৪৫।
১৯ বছর বয়সী বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ফিফটি পূর্ণ করেন ৪৭ বলে। অন্য প্রান্তে অনেকটা দর্শক হয়ে থাকা অভিজ্ঞ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ডি ককও এরপর রানের গতিতে দম দেন।
আক্রমণে এসে নিজের দ্বিতীয় ওভারে প্রিটোরিয়াসকে ফিরিয়ে ৯৬ বলে ৯৮ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন সাইম।
দলকে এগিয়ে নেন এরপর ডি কক ও টনি ডি জর্জি। প্রায় দুই বছর পর ওয়ানডে খেলতে নেমে ডি কক ফিফটি করেন ঠিক ৫০ বলে। তবে তিনিও এরপর বেশিদূর যেতে পারেননি। তাকে বোল্ড করেন নাসিম শাহ। পরের ওভারে সাইমকে ফিরতি ক্যাচ দেন ডি জর্জি (২০ বলে ১৮)।
চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক ম্যাথু ব্রিটস্কি ও অভিষিক্ত সিনেথেম্বা কেশিলের জুটিতে যখন দুইশর কাছাকাছি দক্ষিণ আফ্রিকা, এরপরই ধস নামে তাদের ব্যাটিংয়ে।
কেশিলেকে (২৩ বলে ২২) ফেরান মোহাম্মদ নাওয়াজ। ডনোভান ফেরেইরা ও জর্জ লিন্ডা টিকতে পারেননি। ব্রিটস্কি (৫৪ বলে ৪২) ও বিয়ন ফোরটানকে পরপর দুই বলে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের দুয়ারে দাঁড়িয়ে যান আবরার আহমেদ।
এই লেগ স্পিনারের হ্যাটট্রিক ডেলিভারিতে লুঙ্গি এনগিডিকে এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। ব্যাটসম্যান রিভিউ নেন সঙ্গে সঙ্গে। রিপ্লেতে দেখা যায়, আগে তার ব্যাটে লেগেছিল বল। বেঁচে যান তিনি।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে দারুণ শুরু করা ব্রিটস্কি এদিন গড়েন আরেকটি কীর্তি। প্রথম ৭ ওয়ানডে ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান এখন তার (৫০৯)। তিনি পেছনে ফেলে দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকারই ইয়ানেমান মালানকে (৫০৬)।
নাটকীয় ওই ধসের পর নবম উইকেটে লুঙ্গি এনগিডির সঙ্গে ৩৪ রানের জুটিতে দলের রান আড়াইশ পার করেন কর্বিন বশ, যেখানে তিনি একাই করেন ৩২। ৪০ বলে ৪১ রান করেন এই অলরাউন্ডার।
পাকিস্তানের হয়ে নাসিম ও আবরার নেন ৩টি করে উইকেট।
লক্ষ্য তাড়ায় পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৫৩ রান তুলে পাকিস্তানকে ভালো শুরু এনে দেন ফাখার ও সাইম। ১৫ ওভারে তারা করেন ৮৬ রান।
পরের ওভারে সাইম (৪২ বলে ৩৯) ফিরিয়ে ৮৭ রানের শুরুর জুটি ভাঙেন ফেরেইরা। নিজের পরের ওভারে ফাখারকেও (৫৭ বলে ৪৫) বিদায় করেন তিনি।
তিন নম্বরে নেমে টিকতে পারেননি বাবর আজম। বাঁহাতি স্পিনার ফোরটানের বলে সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক এলবিডব্লিউ হন ৭ রান করে।
চতুর্থ উইকেটে ১১১ বলে ৯১ রানের জুটিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ম্যাচ থেকে অনেকটাই ছিটকে ফেলে দেন রিজওয়ান ও সালমান।
রিজওয়ান ফিফটি করেন ৬৬ বলে। তাকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন বশ। ৫৬ বলে ফিফটি করে এগিয়ে যান সালমান।
শেষের উত্তেজনার শুরু ৪৬তম ওভারে এনগিডির বলে হুসাইন তালাতের (২৫ বলে ২২) বিদায়ে। পরের ওভারে লিন্ডাকে তেড়েফুঁড়ে খেলতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দেন হাসান নাওয়াজ। এনগিডির পরের ওভারে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন সালমানও।
দুই ওভারে প্রয়োজন তখন ১২ রান, যা দাঁড়ায় ৭ বলে ১০ রানে। তবে ৪৯তম ওভারে ফেরেইরার শেষ বল ছক্কা উড়িয়ে, শেষ ওভারে সমীকরণ ৪ রানে নামিয়ে আনেন মোহাম্মদ নাওয়াজ।
স্কোর সমান হওয়ার পর সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মোহাম্মদ নাওয়াজ। পরের বল নাসিমের প্যাডে লাগলে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন করে দক্ষিণ আফ্রিকা, আম্পায়ার তাতে সাড়া দেননি, দক্ষিণ আফ্রিকারও ছিল না কোনো রিভিউ। লেগ বাই থেকে এক রান নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন নাসিম।
একই মাঠে পরের ম্যাচ আগামী বৃহস্পতিবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৯.১ ওভারে ২৬৩ (প্রিটোরিয়াস ৫৭, ডি কক ৬৩, ডি জর্জি ১৮, ব্রিটস্কি ৪২, কেশিলে ২২, ফেরেইরা ৩, লিন্ডা ২, বশ ৪১, ফোরটান ০, এনগিডি ০*, উইলিয়ামস ১; আফ্রিদি ১০-০-৫৫-১, নাসিম ৯.১-১-৪০-৩, সালমান ৩-০-৩০-০, আবরার ৯-১-৫৩-৩, সাইম ৮-০-৩৯-২, মোহাম্মদ নাওয়াজ ১০-০-৪৫-১)
পাকিস্তান: ৪৯.৪ ওভারে ২৬৪/৮ (ফাখার ৪৫, সাইম ৩৯, বাবর ৭, রিজওয়ান ৫৫, সালমান ৬২, তালাত ২২, হাসান নাওয়াজ ১, মোহাম্মদ নাওয়াজ ৯, আফ্রিদি ৪*, নাসিম ০*; এনগিডি ৯-০-৪৬-২, উইলিয়ামস ৭-০-৩৬-০, ফেরেইরা ৯-০-৫৩-২, বশ ৬.৪-০-৩২-২, লিন্ডা ৮-০-৪৯-১, ফোরটান ১০-০-৩৮-১)
ফল: পাকিস্তান ২ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে পকিস্তান ১-০তে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: সালমান আলি আগা
আপনার মতামত লিখুন :