
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রায় ১৫ বছরের ক্যারিয়ার, ৬ হাজারের বেশি রান, ১৩টি সেঞ্চুরি। এতটা পথ পেরিয়ে অবশেষে একটি প্রথমের স্বাদ পেলেন আব্দুল মজিদ। আগে তিনি নানা সময়ে খেলেছেন ঢাকা বিভাগ, ঢাকা মেট্রো, মধ্যাঞ্চলের মতো নানা দলে। এবার জাতীয় লিগে ময়মনসিংহের অভিষেকে নিজ বিভাগের হয়ে তিনি খেলতে পারছেন প্রথমবার। জন্মস্থানের হয়ে দ্বিতীয় ম্যাচেই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান করলেন প্রথম সেঞ্চুরি।
একসময় বাংলাদেশ ‘এ’ দলে খেললেও অনেক দিন ধরেই এই পর্যায়ের বিবেচনায় নেই মজিদ। সমীকরণটা আছে যার সামনে, সেই মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন দারুণ সেঞ্চুরিতে বার্তা দিয়ে রাখলেন নির্বাচকদের। সবশেষ শ্রীলঙ্কা সফরের টেস্ট স্কোয়াডে থাকলেও খেলার সুযোগ পাননি তিনি। এবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দল ঘোষণার আগে নিজের দাবিটা জানিয়ে রাখলেন ঢাকা বিভাগের অধিনায়ক।
চোট-টোটে না পড়লে আইরিশদের বিপক্ষে নিশ্চিতভাবেই টেস্ট খেলবেন যিনি, সেই মুমিনুল হকের প্রস্তুতি ভালো হলেও আউট হয়ে গেছেন সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপে।
লড়িয়ে শতরান মাহিদুলের
ম্যাচের প্রথম দিনে যখন ক্রিজে যান মাহিতুল ইসলাম অঙ্কন, দল তখন ধুঁকছে ৫০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে। সেখান থেকেই লড়াই করে দলকে উদ্ধার করেন অধিনায়ক।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট চতুর্থ সেঞ্চুরিতে ২৭২ বল খেলে ১২২ রান করেন মাহিদুল, যা তার ক্যারিয়ার সেরা। ঢাকা বিভাগ আউট হন ৩১০ রানে। সিলেট বিভাগ দিন শেষ করে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৩৩ রান করে।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আউটার স্টেডিয়ামে ৫ উইকেটে ১২০ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করে ঢাকা। অভিজ্ঞ তাইবুর রহমানকে (২৫) হারায় তারা দ্রুতই। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি রিপন মন্ডলও।
এরপর মাহিদুল ও সুমন খান এগিয়ে নেন দলকে। অষ্টম উইকেটে ১২৫ রানের জুটি গড়েন তিনি।
মাহিদুল ফিফটি করেন ১৩৬ বলে। এক প্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করে শতরানে পা রাখেন তিনি ২২১ বলে।
সুমন মূলত পেসার হলেও ব্যাট হাতের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন নানা সময়ে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে চতুর্থ ফিফটি করে তিনি ৫৪ বলে। ১১ চার ও ১ ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ৭৪ রান করে আউট হন তিনি।
মাহিদুলের বিদায়ে শেষ হয় ইনিংস। ১০ রানের মধ্যে শেষ ৩ উইকেট হারায় তারা।
আগের দিনের তিন উইকেটের সঙ্গে কোনো উইকেট যোগ করতে পারেননি ইবাদত হোসেন চৌধুরি। তিনটি উইকেট নেন আরেক টেস্ট পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদও।
শেষ বিকেলে সিলেটের হয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে কোনো বিপদ হতে দেননি সৈকত আলি ও জাকির হাসান। তৃতীয় দিনে নজর থাকবে এই দলের হয়ে খেলতে নামা মুশফিকুর রহিমের ব্যাটিংয়ের দিকেও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা বিভাগ ১ম ইনিংস: ১০৮.৫ ওভারে ৩১০ (আগের দিন ১২০/৫) (মাহিদুল ১২২, তাইবুর ২৫, রিপন ৮, সুমন ৭৪, নাজমুল অপু ৬, এনামুল ০*; ইবাদত ২২-৩-৮৩-৩, খালেদ ২০.৫-৪-৫৫-৩, তোফায়েল ৯.৫-১-৩৫-১, নাবিল ৩৩-৮-৬৯-১, শাহানুর ১১.১-১-৩৫-১, গালিব ১২-১-২৯-১)।
সিলেট বিভাগ ১ম ইনিংস: ১২ ওভারে ৩৩/০ (সৈকত ১৮*, জাকির ১২*)
তিন সেঞ্চুরিতে রানের পাহাড়ে ময়মনসিংহ
আগের দিন সেঞ্চুরি করেছিলেন মোহাম্মাদ নাঈম শেখ ও মাহফিজুল ইসলাম রবিন। পরদিন তাদেরকে অনুসরণ করলেন আব্দুল মজিদ।
কক্সবাজার আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে রংপুর বিভাগের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ৫৫৬ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে ময়মনসিংহ বিভাগ।
আগের দিনের অপরাজিত ব্যাটসম্যান আইচ মোল্লাকে এ দিন দ্রুতই হারায় ময়মনসিংহ। উইকেটে জমতে পারেননি আরিফুল ইসলামও।
ময়মনসিংহকে এরপর এগিয়ে নেন এই শহরেরই দুই সন্তান মজিদ ও শুভাগত হোম চৌধুরি। পঞ্চম উইকেটে ১৩০ রানের জুটি গড়েন অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটার।
৫ চার ও ২ ছক্কায় ৮৬ বলে ৬৫ রান করে আউট হন শুভাগত।
মজিদ তিন অঙ্কে পা রাখেন ১৬৯ বলে।
গাজি তাহজিবুল ইসলাম ২১ রানে আউট হলেও এরপর ঝড় তোলেন আবু হায়দার রনি। ৫ ছক্কায় ৩৪ বলে ৬০ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
১০ বোলার ব্যবহার করেন রংপুর অধিনায়ক আকবর আলি। কিপিং গ্লাভস খুলে আগের দিন হাত ঘোরান তিনি নিজেও। কিন্তু প্রভাব রাখতে পারেননি কোনো বোলার।
দীর্ঘ সময় ফিল্ডিংয়ের পর ব্যাটিংয়ে নেমে দ্রুত বিদায় নেন রংপুরের দুই ওপেনার মিম মোসাদ্দেক ও আব্দুল্লাহ আল মামুন। তৃতীয় দিনে তাদের অপেক্ষায় ফলো-অন এড়ানোর চ্যালেঞ্জ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ময়মনসিংহ বিভাগ ১ম ইনিংস: ১৪৩ ওভারে ৫৫৬/৬ (ডি.) (আগের দিন ২৮১/২) (আইচ ২৫, মজিদ ১১৯*, আরিফুল ৪, শুভাগত ৬৫, তাহজিবুল ২১, আবু হায়দার ৬০*; সাকলাইন ২১-২-৮৬-০, মেহেদি ২২-৪-৬৫-১, আলাউদ্দিন ১৩-১-৪৪-২, আল মামুন ৭-২-১৬-০, নাসির ১৪-০-৭১-০, হাশিম ৩৪-৬-১১৫-২, তানবীর ১৬-০-৭৬-০, জাভেদ ১১-১-৪৪-১, নাঈম ২-০-৫-০, আকবর ৩-০-১৬-০)।
রংপুর বিভাগ ১ম ইনিংস: ১৪ ওভারে ১৮/২ (মিম ১৪, আল মামুন ২, জাভেদ ২*, নাঈম ২*; আবু হায়দার ৪-১-৬-০, শহিদুল ২-১-১-০, রকিবুল ৫-২-৪-১, শুভাগত ৩-১-৭-১)।
পারলেন না মুমিনুল
৮৪ রান নিয়ে দিন শুরু করেছিলেন মুমিনুল হক। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেঞ্চুরিটি হয়নি তার। বাঁহাতি পেসার রুয়েল মিয়ার বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলে স্টাম্পে টেনে আনেন তিনি ৯২ রানে।
আগের দিন ৪ উইকেটে ২৬০ রান করা চট্টগ্রাম বিভাগ এ দিন আর ১০০ রানও করতে পারেনি। বরিশাল বিভাগের বিপক্ষে প্রথম ইনিংস শেষ হয় তাদের ৩৫৮ রানে।
মুমিনুলের সঙ্গে ক্রিকেজ থাকা ইরফান শুক্কুরও (২১) ভালো করতে পারেননি। চট্টগ্রামকে একটু টেনে নেন দুই স্পিনার নাঈম হাসান (৩৫) ও হাসান মুরাদ (২৮)।
শেষ দিকে নামে ধস। শেষ ৪ উইকেট হারায় তারা স্রেফ ৩ রানের মধ্যে।
বরিশালের অধিনায়ক বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলাম শিকার করেন ৪ উইকেট।
বরিশাল ব্যাটিংয়ে নেমে ইফতেখার হোসেন ইফতিখে হারায় শুরুতেই। আরেক ওপেনার জাহিদউজ্জামান বাইরে চলে যান চোট পেয়ে। এরপর আদিল বিন সিদ্দিক ও সালমান হোসেন ইমন ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে একটু একটু করে এগিয়ে নেন দলকে।
৯২ বলে ৪৩ করে আউট হন আদিল। এরপর আবার ব্যাটিংয়ে নেমে দিন পার করে দন জাহিদ। সালমান অপরাজিত থাকেন ৯৫ বলে ৪৭ রান করে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম বিভাগ ১ম ইনিংস: ১০৮.৩ ওভারে ৩৫৮ (আগের দিন ২৬০/৪) (মুমিনুল ৯২, ইরফান ২১, নাঈম ৩৫, মুরাদ ২৮, আশরাফুল ০, হাসান ০, আশিক ০*; ইয়াসিন ১৭-১-৬১-১, সালমান ৭-১-২৯-০, রুয়েল ২১-১-৭৪-২, মইন ২৬-৩-৭৬-২, তানভির ২৬.৩-৪-৫৬-৪, শামসুর ৫-০-২৫-১, ইফতেখার ৫-১-২০-০, তাসামুল ১-০-৬-০)।
বরিশাল বিভাগ ১ম ইনিংস: ৪০ ওভারে ১১৫/২ (জাহিদ আহত অবসর ১৩, ইফতি ৫, আদিল ৪৩, সালমান ৪৭*; হাসান ৯-২-২৭-০, আশিক ৮-২-৩২-১, মুরাদ ১০-৩-২৬-০, নাঈম ৮-২-১১-১, আশরাফুল ৫-১-১৪-০)।
মিরাজের ৪ নাহিদুলের ৪
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে আগের দিন তিন উইকেট শিকার করা মেহেদী হাসান মিরাজ এ দিন যোগ করতে পারেন কেবল আর একটি উইকেট। চারটি উইকেট নেন আরেক অফ স্পিনার নাহিদুল ইসলাম।
রাজশাহী বিভাগের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ২৬৮ রানে। এতেই তারা লিড পেয়ে যায় ১৪৭ রানের।
প্রথম ইনিংসে ১২১ রানের গুটিয়ে যাওয়া খুলনা বিভাগ দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেটে ৬৮ রান তুলে শেষ করে দ্বিতীয় দিন। পিছিয়ে আছে তারা ৭৯ রানে।
৩ উইকেটে ৮৭ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা রাজশাহী দিনের শুরুতেই হারায় অভিজ্ঞ সাব্বির রহমানকে (২১)। আরেক অপরাজিত ব্যাটসম্যান প্রিতম কুমার কিছুক্ষণ লড়াই করে থামেন ৪৭ রানে। ঘণ্টাদুয়েক ক্রিজে কাটিয়ে ২৬ রানে বিদায় নেন এসএম মেহেরব হাসান।
রাজশাহীকে বলতে গেলে একটাই টেনে নেন শাকির হোসেন। তাকে কিছুটা সঙ্গ দেন দশে নামা আলি মোহাম্মদ ওয়ালিদ (২৪)। নবম উইকেটে ৬২ রান যোগ করেন দুজন।
৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৮৯ রান করে শাকির আউট হন ক্যারিয়ার সেরা ৮৯ রান করে।
খুলনা ব্যাটিংয়ে নামার পর তৃতীয় ওভারেই হারায় সৌম্য সরকারকে (১০)। আলোকস্বল্পতায় খেলা আগেভাগেই শেষ হওয়ার আগে আর কোনো উইকেট হারায়নি তারা। তবে দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং ছিল দুই রকমের।
৬৮ বলে ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন অমিত মজুমদার, একটি করে ছক্কা ও চারে ৪০ বলে ২৭ রানে অপরাজিত এনামুল হক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
খুলনা বিভাগ ১ম ইনিংস: ১২১।
রাজশাহী বিভাগ ১ম ইনিংস: ৮০.২ ওভারে ২৬৮ (আগের দিন ৮৭/৩) (প্রিতম ৪১, সাব্বির রহমান ২১, মেহেরব ২৬, শাকির ৮৯, সানজামুল ১, নিহাদ ১, ওয়ালিদ ২৪, নাহিদ ০*; হালিম ৯-১-৪৩-০, মিরাজ ৩২-৩-১০৬-৪, টিপু ১২-১-৩০-১, মৃত্যুঞ্জয় ৬.২-১-২৫-১, নাহিদুল ১৮-২-৪৮-৪, মুনতাসির ৩-১-৪-০)।
খুলনা বিভাগ ২য় ইনিংস: ১৯ ওভারে ৬৮/১ (অমিত ১৫*, সৌম্য ১০, এনামুল ২৭*; নাহিদ রানা ৫-১-২৭-১, মেহেরব ৬-৩-৭-০, সানজামুল ৫-১-১৩-০, নিহাদ ৩-০-৫-০)।
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                        
                        
                        
                        
                        
                        
                        
আপনার মতামত লিখুন :