
সেঞ্চুরির সঙ্গে দূরত্ব তখন ১১ রানের। বাকি স্রেফ এক ওভার। সেই চ্যালেঞ্জে জিততে পারলেন না তানজিদ হাসান। আউট হয়ে গেলেন তিনি শেষ ওভারের প্রথম বলেই। তবে শেষটায় আক্ষেপ রয়ে গেলেও ইনিংসটায় তার প্রাপ্তি কম নেই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সাফল্যযাত্রার বছরে বাংলাদেশের ওপেনার এই ম্যাচেও গড়েছেন একাধিক রেকর্ড।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে চট্টগ্রামে শুক্রবার ৬২ বলে ৮৯ রানের ইনিংস খেলেন তানজিদ। এই সংস্করণে দেশের হয়ে তার আগের সর্বোচ্ছ ছিল ৭৩।
এই বছর বেশ কিছু রেকর্ড তিনি গড়েছেন আগেই। এই ইনিংসে আরও সমৃদ্ধ হয় সেই রেকর্ডযাত্রা।
আগের ম্যাচে দলের সর্বোচ্চ ৪৮ বলে ৬২ রান এসেছিল তানজিদের ব্যাট থেকে। এই ম্যাচটি তিনি শুরু করেন তিনি হাজার রান থেকে ৩৩ রান পেছনে। ইনিংসের শুরুর দিকে দুই দফায় জীবন পেয়ে শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যান হাজার রানে। তার সঙ্গী হয় একটি রেকর্ড।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম হাজার রানের রেকর্ড এখন তার। ৪২ ইনিংসে স্পর্শ করলেন এই মাইলফলক। পেছনে পড়ে গেল তাওহিদ হৃদয়ের ৪৫ ইনিংসের রেকর্ড। দাভিদ মালানের বিশ্বরেকের্ডের ধারেকাছে অবশ্য যেতে পারেননি তারা (২৪ ইনিংস)।
একটু পর তিনি পা রাখেন পঞ্চাশে। এ বছর যেটি তার সপ্তম ফিফটি। বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে এক পঞ্জিকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি পঞ্চাশছোঁয়া ইনিংসর রেকর্ডটি তিনি গড়েছিলেন আগেই। নিজের সেই রেকর্ডই আরও সমৃদ্ধ হলো এই ইনিংসে। বাংলাদেশের জার্সিতে এক বছরে পাঁচটি ফিফটিও নেই আর কোনো ব্যাটসম্যানের।
এই ইনিংসে তানজিদন চার মারেন ৯টি, ছক্কা ৪টি। এখানেও একটি রেকর্ডে তিনি শীর্ষে উঠে যান, আরেকটি রেকর্ডে পোক্ত করেন নিজের অবস্থান।
নবম বাউন্ডারিটি মেরে তানজিদ পেছনে ফেলেন লিটন কুমার দাসকে। এই বছর তানজিদের চার এখন ৫৮টি, এক পঞ্জিকাবর্ষে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। ২০২২ সালে ৫৭ চার মেরেছিলেন লিটন।
ছক্কার রেকর্ড তানজিদ করে ফেলেছিলেন আগেই। এই ম্যাচের চারটি ছক্কার পর এ বছর তার ছয় এখন ৩৮টি। তালিকার পরের দুটি নামও যোগ হয়েছে এই বছরই। পারভেজ হোসেন ইমন মেরেছেন ২৯ ছক্কা, সাইফ হাসান ২৭টি। এই বছরের আগে রেকর্ডটি ছিল গত বছর যৌথভাবে জাকের আলি ও তাওহিদ হৃদয়ের ২১ ছক্কা।
এই সংস্করণে বাংলাদেশের তৃতীয় শতরানের আশা জাগিয়েও শেষ পর্যন্ত করতে পারেননি। তবে ইনিংস শেষে আরেকটি রেকর্ডের চূড়ায় উঠে যান তিনি।
২০ ওভারে বাংলাদেশ রান তোলে ১৫১। তাতে তানজিদের অবদান ৮৯। শতকরা হার ৫৮.৯৪%। বাংলাদেশের সম্পূর্ণ হওয়া দলীয় ইনিংসে শতকরা হারে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ এটিই।
আগের রেকর্ডটি ছিল তার পূর্বসূরী তামিম ইকবালের, যেদিন তিনি উপহার দিয়েছিলেন টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরি। ২০১৬ বিশ্বকাপে ওমানের বিপক্ষে সেই ম্যাচে দলের ১৮০ রানের মধ্যে তামিমের অবদান ছিল ১০৩। শতকরা হার ৫৭.২২%।
নিজের আরও একটি রেকর্ড তিনি বাড়িয়ে নেন এ দিন। টি-টোয়েন্টিতে এক পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের কীর্তি গড়েছিলেন তিনি আগেই। এই ম্যাচের পর এ বছর তার রান ২৪ ইনিংসে ৭১১। আগের রেকর্ড ছিল মোহাম্মদ নাঈম শেখের। ২০২১ সালে ২৬ ইনিংসে তিনি করেছিলেন ৫৭৫ রান।
টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ে তানজিদের সামগ্রিক ব্যাটসম্যানশিপে উন্নতির আরও প্রমাণ আছে পরিসংখ্যানে। গত বছর পর্যন্ত ১৮ ইনিংসে তার ব্যাটিং গড় ছিল ২১.৫৬, স্ট্রাইক রেট ছিল মাত্র ১১৪.২৩। এ বছর এখনও পর্যন্ত তার গড় ৩২.৩১, স্ট্রাইক রেট ১৩৫.২০।
আগামী মাসে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। ডিসেম্বরেও একটি সিরিজের আলোচনা আছে। সবকটি রেকর্ডই তাই আরও পোক্ত করার সুযোগ থাকবে তানজিদের।
আপনার মতামত লিখুন :