
স্টেডিয়ামে দর্শক উপস্থিতি ৮২ হাজার ৪৩৮ জন। অস্ট্রেলিয়ার পাশাপাশি ভারতীয় সমর্থকও সেখানে অনেক। মাঠের ক্রিকেটে ভক্তদের প্রত্যাশা অবশ্য পূরণ করতে পারল না সুরিয়াকুমার ইয়াদাভের দল। নতুন বলে দুর্দান্ত এক স্পেলে ভারতের ব্যাটিংয়ের ভিত নাড়িয়ে দিলেন জশ হেইজেলউড। অল্প রানের লক্ষ্যে শেষ দিকে কয়েকটি উইকেট হারালেও, অনায়াস জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া।
পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয়টিতে অস্ট্রেলিয়ার জয় ৪ উইকেটে। প্রথম ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিল বৃষ্টিতে।
মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজি) শুক্রবার ভারতের ১২৫ রান ৪০ বল হাতে রেখে পেরিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
ভারতের হারে এই সংস্করণে শিভাম দুবের টানা ৩৭ ম্যাচের অপরাজেয় রেকর্ড যাত্রাও থেমে গেল।
ভারতের হয়ে আভিশেক শার্মা একাই করেন ৬৮ রান। এই ওপেনারের ৩৭ বলের ইনিংস গড়া ৮ চার ও ২ ছক্কায়।
সাত নম্বরে নেমে ৩৩ বলে ৩৫ রান করেন হার্শিত রানা। বাকিদের সম্মিলিত রান ১৯! অতিরিক্ত থেকে আসে ৩ রান।
অস্ট্রেলিয়ার জয়ের নায়ক হেইজেলউড। চার ওভারে স্রেফ ১৩ রান দিয়ে শুবমান গিল, সুরিয়াকুমার ও তিলাক ভার্মার গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নেন ৩৪ বছর বয়সী পেসার। ‘ডট’ বল খেলান তিনি ১৫টি।
অন্য দুই পেসার জেভিয়ার বার্টলেট ও ন্যাথান এলিস শিকার করেন ২টি করে উইকেট।
রান তাড়ায় ৪ ছক্কা ও ২ চারে ২৬ বলে ৪৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে লক্ষ্যটা আরও সহজ করে দেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক মিচেল মার্শ।
নেট অনুশীলনের সময় ঘাড়ে বলের আঘাতের পর বৃহস্পতিবার মারা যাওয়া ১৭ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার বেন অস্টিনের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় ম্যাচের শুরুতে।
উইকেটে বাউন্স ছিল যথেষ্ট, সিম মুভমেন্টও ছিল অনেক। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে পাওয়ার প্লেতে চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় ভারত।
হেইজেলউডের করা ম্যাচের প্রথম বলেই গিলকে এলবিডব্লিউ দিয়েছিলেন আম্পায়ার। ভারতের টেস্ট ও ওয়ানডে অধিনায়ক রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান বল স্টাম্প মিস করে যেত বলে। প্রথম ওভারে আসে কেবল এক রান।
দ্বিতীয় ওভারে বার্টলেটকে আভিশেক চার ও ছক্কা মারলেও, পরের ওভারে গিলকে বিদায় করে দেন হেইজেলউড। চতুর্থ ওভারে বোলিংয়ে এসে সাঞ্জু স্যামসনকে এলবিডব্লিউ করে ফেরান এলিস।
হেইজেলউডের পরের ওভারে জীবন পেয়ে, পরের বলেই কিপারকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন সুরিয়াকুমার। একই ওভারে লেগ সাইডে খেলার চেষ্টায় সহজ ক্যাচ তুলে দেন তিলাক। তখন ৩২ রানে নেই ৪ উইকেট।
এক স্পেলে হেইজেলউড নিজের কোটার বোলিং শেষ করে দেন ইনিংসের সাত ওভারের মধ্যে।
অষ্টম ওভারে তৃতীয় রানের চেষ্টায় ভুল বোঝাবুঝিতে আকসার প্যাটেল যখন রান আউটে কাটা পড়লেন, ভারতের রান তখন ৫ উইকেটে ৪৯।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এর চেয়ে কম রানে ভারতের প্রথম ৫ উইকেট হারানোর ঘটনা আছে কেবল দুটি।
সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে এক প্রান্তে আভিশেক চালিয়ে যান তার সহজাত আগ্রাসী ব্যাটিং। তাকে সঙ্গ দেন হার্শিত। ষষ্ঠ উইকেটে দুজন গড়েন ৫৬ রানের জুটি। আভিশেক ফিফটি করেন ২৩ বলে।
ষোড়শ ওভারে হার্শিতকে ফিরিয়ে পঞ্চাশোর্ধ জুটি ভাঙেন বার্টলেট। একই ওভারে কিপার জশ ইংলিসের দুর্দান্ত ক্যাচে আউট হন শিভাম দুবে। কুলদিপ ইয়াদাভ ফেরেন শূন্য রানে।
১৯তম ওভারে আভিশেককে থামান এলিস। পরের বলে জাসপ্রিত বুমরাহর রান আউটে ভারত অলআউট হয়ে যায় আট বল বাকি থাকতেই।
জবাবে ট্রাভিস হেড ও মার্শের ব্যাটে উড়ন্ত শুরু পায় অস্ট্রেলিয়া। প্রথম চার ওভারে আসে বিনা উইকেটে ৪৯ রান।
পঞ্চম ওভারে হেডের (১৫ বলে ২৮) ঝড় থামান রহস্য স্পিনার ভারুন চক্রবর্তি। কুলদিপের এক ওভারে দুটি করে চার ও ছক্কা মেরে ফিফটির কাছে গিয়ে, ওই ওভারেই ফেরেন মার্শ।
দুই ওপেনারকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া ৮৭ রান তুলে ফেলে ৮ ওভারেই।
টিম ডেভিড টিকতে পারেননি। ইংলিস ২০ রান করেন ২০ বলে। অস্ট্রেলিয়ার দরকার যখন ২ রান, বুমরাহর পরপর দুই বলে আউউ হয়ে যান মিচেল ওয়েন ও ম্যাথু শর্ট। পরের ওভারেই ম্যাচের সমাপ্তি।
আগামী রোববার তৃতীয় ম্যাচ হবে হোবার্টে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ১৮.৪ ওভারে ১২৫ (গিল ৫, আভিশেক ৬৮, স্যামসন ২, সুরিয়াকুমার ১, তিলাক ০, আকসার ৭, হার্শিত ৩৫, দুবে ৪, কুলদিপ ০, ভারুন ০*, বুমরাহ ০; হেইজেলউড ৪-০-১৩-৩, বার্টলেট ৪-০-৩৯-২, এলিস ৪.৩-০-২১-২, স্টয়নিস ৪-০-২৪-১, ওয়েন ১-০-১৩-০, কুনেমান ২-০-১৪-০)
অস্ট্রেলিয়া: ১৩.২ ওভারে ১২৬/৬ (মার্শ ৪৬, হেড ২৮, ইংলিস ২০, ডেভিড ১, ওয়েন ১৪, স্টয়নিস ৬*, শর্ট ০, বার্টলেট ০*; বুমরাহ ৪-০-২৬-২, হার্শিত ২-০-২৭-০, ভারুন ৪-০-২৩-২, কুলদিপ ৩.২-০-৪৫-২)
ফল: অস্ট্রেলিয়া ৪ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজে প্রথম দুটির পর ১-০তে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া
ম্যান অব দা ম্যাচ: জশ হেইজেলউড
আপনার মতামত লিখুন :