
ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স, ঢাকা ডায়নামাইটস, ঢাকা প্লাটুন, মিনিস্টার ঢাকা, ঢাকা ডমিনেটর্স, দুর্দান্ত ঢাকা, ঢাকা ক্যাপিটালস। বিপিএলের নানা আসরে ঢাকার ফ্র্যাঞ্চাইজি এভাবেই অংশ নিয়েছে নানা সময়ে নানা নামে। অন্য দলগুলির অবস্থাও তথৈবচ। দলগুলির বারবার নাম পরিবর্তন নিয়ে সামনে কঠোর হচ্ছে বিসিবি। ইচ্ছেমতো আর নাম পরিবর্তন করা যাবে না বলে জানিয়েছেন বিসিবির সহ-সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন।
বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইফতেখার আহমেদ কিছুদিন আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, এত কম সময়ের মধ্যে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা ‘নেক্সট টু ইমপসিবল’, তবে চেষ্টা তারা করবেন। সেই পথেই প্রথম বড় প্রক্রিয়া শেষ হয় মঙ্গলবার। এ দিনই ছিল ইওআই (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) জমা দেওয়ার শেষ সময়।
বিসিবি জানায়, এবারের বিপিএলে অংশ নেওয়ার প্রথম ধাপ হিসেবে যোগ্যতার শর্ত পূরণ করে ১১টি প্রতিষ্ঠান তাদের পছন্দের নাম উল্লেখ করে ইওআই জমা দিয়েছে। খুলনা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামের ফ্র্যাঞ্চাইজি পেতে আবেদন পড়েছে দুটি করে।
দল নিতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো– টগি স্পোর্টস লিমিটেড (রংপুর রাইডার্স), চ্যাম্পিয়ন স্পোর্টস লিমিটেড (ঢাকা ক্যাপিটালস), ফার্স্ট এসএস এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেড (কুমিল্লা ফাইটার্স), এস. কিউ স্পোর্টস (চট্টগ্রাম কিংস), ট্রায়াঙ্গেল সার্ভিসেস (চট্টগ্রাম), মাইন্ড ট্রি লিমিটেড (খুলনা), রূপসী কনক্রিট প্রোডাক্ট লিমিটেড (খুলনা), নাবিল গ্রুপ (রাজশাহী), দেশ ট্রাভেলস (রাজশাহী কিংস), আকাশবাড়ি হলিডে অ্যান্ড রিসোর্টস (বরিশাল), জে এম স্পোর্টস অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট (সিলেট ইউনাইটেড) ও বাংলা মার্ক লিমিটেড (নোয়াখালী)।
আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার, সবশেষ দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল ফ্র্যাঞ্চাইজি এবারের আসরে আগ্রহী নয়। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বরিশালের ফ্র্যাঞ্চাইজি পেলে তাই বদলে যেতে পারে দলের নাম। বিপিএলের সফলতম দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স গতবারের মতো নেই এবারও। এবার কুমিল্লার কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি থাকলেও পাল্টে যেতে পারে দলের নাম।
বিপিএলে এসব নতুন নয় কিছুই। তবে ভবিষ্যতে যাতে নাম পাল্টানো না যায়, সেই ব্যবস্থা সামনে নেওয়া হবে বলে জানালেন বিসিবির সহ-সভাপতি ও বিপণন বিভাগের চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন।
“একদিন দল হয় ঢাকা ক্যাপিটাল, পরদিন ঢাকা রাইডার্স, আবার কখনও অন্য নামে—এটা ঠিক নয়। তাই আমরা চাই, যে-ই বোর্ডে আসুক, পাঁচ, দশ বা বিশ বছর পরেও সেই নামই থাকুক এবং ব্র্যান্ড হিসেবে মান বহন করুক। যেমন আন্তর্জাতিক কোনো ব্র্যান্ড থাকে, তেমনভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজিও তার নাম ধরে রাখবে। নাম পরিবর্তন করা যাবে না। আমরা এই নিয়ম কঠোরভাবে চালু করছি।”
ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা বললে, বিপিএলে এখনও পর্যন্ত স্রেফ তিনটি ফ্র্যাঞ্চাইজি মোটামুটিভাবে সেটি পেরেছে- কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, রংপুর রাইডার্স ও ফরচুন বরিশাল। গত বছরের অগাস্টে দেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পথ ধরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এখন ক্রিকেট থেকে অনেক দূরে। রংপুর রাইডার্সের দাপুটে উপস্থিতি আছে এখনও এবং এবারও তারা নিশ্চিতভাবেই থাকবে। ফরচুন বরিশালের মতো দলের না থাকাটা বিপিএলের জন্য বড় একটি ধাক্কা অবশ্যই। টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বড় সমর্থকগোষ্ঠীও তারা গড়ে তুলতে পেরেছেন গত কয়েক বছরে।
দলটির কর্ণধার মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন, সময় স্বল্পতার জন্য এবারের বিপিএলে তারা থাকছেন না।
‘‘আমাদের ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সময় খুবই কম, সঙ্গে আশঙ্কা—এভাবে হলে ভালো মানের বিপিএল হবে না। আমরা সবসময় পরিকল্পনা করে, গুছিয়ে কাজ করেছি। এবার এত অল্প সময়ে সেটা সম্ভব না। সবাই হয়তো চেষ্টা করবে, কিন্তু আমি এলোমেলো কাজ করতে পারি না। অযৌক্তিক হিসাব বা তাড়াহুড়ো দিয়ে দল গড়া—এটার সঙ্গে আমি থাকতে চাই না।”
“এক মাসে কি দল গোছানো যায়? যদি সময় পেতাম, ভাবার সুযোগ থাকত, আমরা অবশ্যই নামতাম। তবে এটা বলছি না যে, আমরা আর কখনও বিপিএলে দল নেব না বা খেলব না। আগামীতে সুযোগ এলে আমরা থাকার চেষ্টা করব।”
ডিসেম্বর-জানুয়ারির উইন্ডোতে হতে যাচ্ছে পরবর্তী বিপিএল। শুরুর সম্ভাব্য দিন ১৯ ডিসেম্বর, প্লেয়ার্স ড্রাফটের সম্ভাব্য সময় ১৭ নভেম্বর।
বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, এবার লিগ আয়োজনের পরিকল্পনা হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদি লাভ নিশ্চিত করে তাদের আগ্রহ টিকিয়ে রাখা।
‘‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, যেসব ফ্র্যাঞ্চাইজি বিপিএলে বিনিয়োগ করবে, তারা যেন কয়েক বছরের মধ্যেই লাভবান হতে পারে। তবেই তারা দীর্ঘ সময় ধরে আগ্রহী থাকবে। এটিই আমাদের মূল পরিকল্পনা।’’
আপনার মতামত লিখুন :