
শক্তি, সামর্থ্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্যে অনেক পিছিয়ে থাকা নেপালের বিপক্ষে সবশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজে হেরে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজ উন্মুখ হয়ে আছে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে। সঙ্গে প্রতিশোধের ভাবনা থাকাও অস্বাভাবিক নয়। ঘরের মাঠে এই সংস্করণে বাংলাদেশের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশড হয়েছিল তারা। ক্যারিবিয়ানদের ঠিক উল্টো অবস্থায় আছে বাংলাদেশ। ২০ ওভারের ক্রিকেটে ভালো সময় কাটানো দলটি নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার টানা পাঁচটি সিরিজ জয়ের ছক কষছে।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে সোমবার প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে লিটন দাসের দল। খেলা শুরু হবে সন্ধ্যা ছয়টায়।
গত জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকে দুটি সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। পরে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জেতে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। চলতি মাসেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে আফগানিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়েছেন নাসুম আহমেদ, সাইফ হাসানরা।
আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা বাংলাদেশকে তাদের মাটিতেই হারানোর কঠিন চ্যালেঞ্জ নিতে হবে শেই হোপের দলকে। জিততেই যে ভুলে গেছে টি-টোয়েন্টির সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। টানা সাতটি সিরিজে হেরেছে তারা, এর মধ্যে সবচেয়ে বড় আঘাত নিশ্চিতভাবেই নেপালের বিপক্ষে হার। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানের হারও পোড়াচ্ছে ক্যারিবিয়ানদের।

টি-টোয়েন্টিতে দলের একের পর এক বাজে পারফরম্যান্সে নেতৃত্ব হারিয়েছেন রভম্যান পাওয়েল। হোপের অনুপস্থিতিতে নেপালে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া আকিল হোসেনও ভাগ্য বদলাতে পারেননি।
এরই মধ্যে হোপের নেতৃত্বে ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবার টি-টোয়েন্টির চ্যালেঞ্জ নিতে হবে তাদের। সামলাতে হবে এমন এক বাংলাদেশকে, যাদের দল দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ।
স্পিনে আছেন শেখ মেহেদি হাসান, নাসুম আহমেদ, রিশাদ হোসেন। নতুন বলে বেশ সফল মেহেদি। মাঝের ওভারে ব্যবধান গড়ে দেওয়ার সামর্থ্য আছে নাসুম ও রিশাদের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সবশেষ সিরিজে নাসুম হয়েছিলেন সিরিজ সেরা।
পেস বোলিংয়ে মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদের সঙ্গে আছেন তানজিম হাসান ও শরিফুল ইসলাম।
এর পাশাপাশি স্পিনে আরও কিছু বিকল্প থাকছে লিটনের হাতে।
টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিংয়ে অনেক উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। বেড়েছে শটের পরিধি। ছক্কা মারতে পারা ব্যাটসম্যানের সংখ্যা বেড়েছে। ক্যারিবিয়ানদের চেয়ে এই বছর বেশি ছক্কা মেরেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ম্যাচ পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালোভাবে পড়তে শিখছেন তারা।
২০২১ বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ নিজেদের শেষ দুটি সিরিজ খেলেছিল দেশের মাটিতে। স্পিন মঞ্চে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল ৪-১ ব্যবধানে, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছিল ৩-২ ব্যবধানে।
পরে বিশ্বকাপে সেই জয়ের আত্মবিশ্বাস কোনো কাজেই আসেনি। আসরে সব মিলিয়ে আট ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়ে জিততে পেরেছিল কেবল দুটিতে- ওমান ও পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে।
এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও দেশের মাটিতে খেলবে বাংলাদেশ। এই ছয় ম্যাচে স্পিন মঞ্চ বানিয়ে যেনতেন জয়ের পথে হাঁটতে চান না অধিনায়ক লিটন। বরং যতভাবে সম্ভব নিজেদের পরীক্ষা করে নিয়ে বিশ্বকাপের বড় মঞ্চের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে চান তিনি।
বাংলাদেশের চেয়ে উইকেট নিয়ে অনেক বেশি ভাবছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিশেষ করে মিরপুরের অভিজ্ঞতার পর যতটা ভালোভাবে সম্ভব উইকেট বুঝে নিতে চাচ্ছেন অধিনায়ক হোপ। প্রাথমিকভাবে ব্যাটিং মহায়ক, ভালো উইকেট মনে হলেও হয়তো তার কোণে স্পিন মঞ্চের কোনো ভাবনা থেকে থাকবে। আগে থেকেই তারা দলে স্পিনে শক্তি বাড়িয়েছেন, যোগ করেছেন বাঁহাতি স্পিন খ্যারি পিয়েরকে।
চট্টগ্রামে শিশির পড়ছে দুই দিন ধরে। ম্যাচেও পড়তে পারে এর প্রভাব। টস হয়ে উঠতে পারে গুরুত্বপূর্ণ। সে সব একপাশে সরিয়ে রেখে আপাতত নিজেদের নিয়েই ভাবনায় মশগুল লিটন ও হোপ। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে দুই জনই দিলেন কঠিন লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি।
আপনার মতামত লিখুন :