
২০২৭ বিশ্বকাপের বাকি আছে আর দুই বছরের মতো। বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য মেহেদী হাসান মিরাজের প্রয়োজন দুই থেকে তিন মাস। বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কের চোখে, বিশ্বকাপ এখনও অনেক দূরে। আপাতত তিনি ভাবতে চান নিকট ভবিষ্যৎ নিয়ে।
বিশ্বকাপ প্রস্তুতির আসছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের উইকেটের প্রসঙ্গে। ধীরগতির ও স্পিন বান্ধব উইকেটে খেলে সিরিজটি বাংলাদেশ জিততে পেরেছে ২-১ ব্যবধানে। টানা চার সিরিজ হারার পর অবশেষে জয়ের স্বস্তিও মিলেছে। তবে অস্বস্তির কাঁটাও তো কিছু বিঁধছে। এই ধরনের উইকেটে খেলে ম্যাচ জিততে পারলেও দল হিসেবে সামগ্রিক উন্নদি কতটা হবে, সেই প্রশ্ন উঠছে।
মিরাজ অবশ্য ঘরের মাঠের সুবিধায় নেওয়ায় সমস্যা কিছু দেখেন না। সিরিজ শেষে তিনি বললেন, ফলাফলই তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
“পৃথিবীর যে জায়গায় খেলতে যান না কেন, যাদের সাথে আমরা খেলি না কেন, তারা কিন্তু হোম অ্যাডভান্টেজ নেয়। আমরা নিউ জিল্যান্ডে আমি খেলেছি, ওখানে কিন্তু তারা কিন্তু হোম অ্যাডভান্টেজটা নিয়েছে। কোনো দল যদি বাংলাদেশে আসে, আমরা তো অবশ্যই হোম অ্যাডভান্টেজ নেব। কারণ দিন শেষে সবাই ফলাফলই চায়।”
এই ধরনের দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জয়ের সাফল্য তো বাংলাদেশের কম নেই। বিশেষ করে ঘরের মাঠে। দেশের বাইরে সেই সাফল্যের হার অনেক কম। বৈশ্বিক আসরে তো সাফল্যের ছিটেফোঁটাও নেই। সেই ব্যর্থতার পেছনে অনেক কারণে মধ্যে একটি কারণ মনে করা হয় মিরপুরের উইকেটকে।
দেশের মূল ক্রিকেট ভেন্যুর উইকেটের যে রূপ বেশির ভাগ সময় থাকে, বৈশ্বিক আসরগুলোর উইকেট থাকে পুরো উল্টো। এখানকার নিচু বাউন্স, অসমান বাউন্স, ধীরগতির উইকেটে প্রচুর ম্যাচ খেলার পর বিশ্ব আসরে গিয়ে ব্যাটিং সহায়ক কিংবা স্পোর্টিং উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ও বোলাররা ঠিকভাবে মানিয়ে নিতে পারেন না বলে মনে করা হয়।
২০২৭ বিশ্বকাপ যৌথভাবে হবে দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়ায়। সেখানে উইকেট মিরপুরের চেয়ে পুরো ভিন্ন হবে নিশ্চিতভাবেই।
তবে ধারণার সঙ্গে ঠিক একমত নন মিরাজ। বিশ্বকাপে ভালো করার সঙ্গে দেশের মাঠে ভালো উইকেটে খেলার কোনো সম্পর্ক তিনি দেখেন না।
“হয়তো আমরা বিশ্বকাপে গিয়ে অনেক ভালো কিছু করতে পারিনি, তবে সেটার জন্য আলাদা একটা প্রক্রিয়া এবং আলাদা পরিকল্পনা করতে হবে। আমার কাছে মনে হয়, সেই পরিকল্পনাটা হওয়া উচিত দুই থেকে তিন মাস আগে থেকে, আমরা কীভাবে খেলব, কীভাবে আমরা স্কিল ক্যাম্প করব, কীভাবে আমাদের প্রস্তুতি থাকবে, সেটার জন্য আলাদাভাবে কোথায় আমরা অনুশীলন করব। বিশ্বকাপের আগে এইভাবে সেই জিনিসগুলো করা উচিত। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলোতে আমার মনে হয় হোম অ্যাডভান্টেজ খুবই জরুরি।”
তবে দেশের মাঠে সব দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ঘরের মাঠের সুবিধা যে পাওয়া যাবে না, সেটিই মানছেন মিরাজ। বিশেষ করে আফগানিস্তান বা উপমহাদেশের দেশগুলি তো স্পিনে এমনিই ভালো। ঘরের মাঠের উইকেটের ফায়দা নেওয়া হবে তাই প্রতিপক্ষ বুঝে। কিন্তু বিশ্বকাপ নিয়ে তিনি এখনই ভাবতে নারাজ।
“আমাদের তো আর অনেক হোম সিরিজ আছে। আমরা যে সব ম্যাচই এখানে (মিরপুরে) খেলব, এরকম কোনো কিছু নয়। আমরা হয়তো বাইরেও অনেক ম্যাচ খেলব। যেহেতু আফ্রিকাতে খেলা আছে (২০২৭ বিশ্বকাপ), আফ্রিকার খেলার আগে হয়তো টিম ম্যানেজমেন্ট, আমরা যারা আছি, আরও সুন্দরমতো প্রস্তুতি নিতে পারব।”
“কিন্তু বিশ্বকাপ তো এখনও অনেক দেরি। আমাদের সামনে যে সিরিজগুলো আছে, সেগুলোর উপরে ফোকাস করা উচিত এবং আমাদের আগে অবস্থান (র্যাঙ্কিংয়ে) ঠিক করা উচিত। আমাদের জায়গাটা, অবস্থানটা ঠিক করতে হবে আগে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে সিরিজ জিতে বাংলাদেশ স্রেফ দুটি রেটিং পয়েন্ট পেয়েছে। র্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান আছে আগের মতোই ১০ নম্বরে। সিরিজ হেরে ক্যারিবিয়ানরা হারিয়েছে একটি রেটিং পয়েন্ট। তারা আছে আগের মতোই ৯ নম্বরে।
১৪ দলের ২০২৭ বিশ্বকাপে সরাসরি খেলবে দুই স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ে এবং ২০২৭ সালের ৩১ মার্চ তারিখের র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ অন্য আট দল। বাকি চারটি দলকে বিশ্বকাপ খেলতে হবে বাছাই পেরিয়ে। নামিবিয়া স্বাগতিক হলেও আইসিসির পূর্ণ সদস্য না হওয়ায় তাদেরকে থাকতে হবে বাছাই প্রক্রিয়ায়।
আপনার মতামত লিখুন :