ওয়ানডে সিরিজের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছিল মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে। হঠাৎ একটু আলোড়ন ড্যারেন স্যামিকে দেখে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পরপর দলের দুজন ক্রিকেটারসহ ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ এলেন মাঠে। আগের দিন ঢাকায় পা রেখেছেন তারা। তার পরও তাদেরকে দেখে একটু বিস্ময়ের কারণ, এ দিনের অনুশীলন যে বাতিল করেছিল ক্যারিবিয়ানরা!
দলীয় অনুশীলন বাতিল হলেও ব্র্যান্ডন কিং ও আলিক আথানেজকে নিয়ে ঠিকই মাঠে এলেন স্যামি। দুই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে তিনি গেলেন একাডেমি মাঠে। মুখে চিরচেনা হাসি, আচরণে আন্তরিকতা। করর্মদন করলেন কয়েকজন মাঠকর্মীদের সঙ্গে। তার মাঠে আসার আরেকটি কারণ বোঝা গেল ঘণ্টাখানেক পর। মূল মাঠে ঢুকে তিনি চলে গেলেন উইকেট দেখতে।
তখন চটের আস্তরণ সরানো হচ্ছিল সেন্টার উইকেট থেকে। সেখানে প্রস্তুত হচ্ছে দুটি উইকেট। একটিতে ঘাস তুলনামূলক বেশি, অন্যটিতে খানিকটা শুষ্কভাব। কোনটি হবে শনিবারের ম্যাচের উইকেট, তা এখনও অজানা। দুটোই মনোযোগ দিয়ে দেখলেন স্যামি। নিচু হয়ে মাটি ছুঁয়ে দেখলেন ঘাসের ঘনত্ব, একটি সফট বল দিয়ে বোঝার চেষ্টা করলেন বাউন্স কেমন।
কিছুক্ষণ পর তার মুখে দেখা গেল চওড়া হাসি। স্যামি মিরপুরে নতুন নন। বিপিএলে খেলেছেন, কোচিং করেছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়েও বহুবার এসেছেন। এখানকার সাজসজ্জা, উইকেটের গতি, এমনকি দর্শকদের উচ্ছ্বাস সবই তার পরিচিত। কিন্তু এবার তিনি কোচ, দায়িত্ব তার তরুণ দলকে এমন এক উইকেটে মানিয়ে নেওয়া, যেখানে অনেক বড় দলও তালগোল পাকিয়েছে। মুঠোফোনে কয়েকটি ছবি তুলেও রাখলেন।
বিসিবির হেড অব টার্ফ মানেজমেন্ট টনি হেমিংও গেলেন স্যামির সঙ্গে গেলেন মূল উইকেটে। দুজনের আরও কিছুক্ষণ আলোচনা হলো।
মিরপুরে যে কোনো সিরিজ মানেই আলোচনার কেন্দ্রে উইকেট। এই ২২ গজ প্রায়ই রহস্য হয়ে আসে সব দলের জন্য। স্যামি ধাঁধাটাই বুঝতে এসেছিলেন এ দিন।
উইকেট পরিদর্শনের আগে কিং-আথানেজের সঙ্গে নেট সেশনেও স্যামিকে দেখা গেল দারুণ সক্রিয়। শুরুটা হলো থ্রো ডাউন দিয়ে। প্রথমে একদমই ঠিকঠাক হচ্ছিল না। থ্রোয়ারদের বল পড়ছে কখনও ফুল টসে, কখনও শর্ট লেংথে। দুই ব্যাটার ছন্দ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কোচ স্যামি কিছুক্ষণ দেখলেন, তারপর নিজেই যেন ফিরে গেলেন ক্রিকেটার পরিচয়ে। কোকাবুরা বলের বাক্সটা পাশে রেখে নিজেই হাতে নিলেন বল। কিছুটা গতি, কিছুটা নিখুঁত লেংথে স্যামির থ্রো দেখে মনে হচ্ছিল, এখনও মাঠে নামলে চালিয়ে নিতে পারবেন!
এক পর্যায়ে থ্রোয়ারদের ডেকে দেখালেন স্যামি দেখালেন, কীভাবে বল ছুড়তে হবে, কেমন জায়গায় পড়লে ব্যাটার বুঝতে পারবেন লেংথ। কয়েকটা থ্রো নিজেই করে বুঝিয়ে দিলেন। এরপর থেকেই থ্রো ডাউন সেশন ছন্দে চলে এলো। আথানাজে ও কিং খেলছিলেন মূলত ফুল লেংথ ডেলিভারি, মাঝে মাঝে শর্ট বলও খেলছিলেন কিছু।
এই সিরিজ দিয়ে মিরপুর স্টেডিয়ামে ৮৬ দিন পর ফিরছে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। এই বিরতিতে উইকেট ও আউটফিল্ড যেন নতুন প্রাণ পেয়েছে। বিসিবি এ সময়ে মাঠ সাজাতে বেশ বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করেছে। উইকেট ও টার্ফ ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে থাকা অস্ট্রেলিয়ান বিশেষজ্ঞ টনি হেমিং নিজে তদারকি করছেন মিরপুরের সবুজ গালিচা ও সেন্টার উইকেটের প্রস্তুতি।
একাডেমি মাঠে যখন স্যামি তার দুই ব্যাটারকে নিয়ে অনুশীলন করছিলেন, সেখানেও হাজির হন টনি হেমিং। দুজনের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ আলাপ চলে। হাতে সফট বল নিয়ে হেমিং ইশারায় বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন উইকেটে কেমন বাউন্স থাকতে পারে, বল কেমন আচরণ করতে পারে। স্যামি মনোযোগ দিয়ে শুনলেন, মাঝে মধ্যে হেসে কিছু কিছু করলেন। তারপর থ্রোয়ারদের কাছ থেকে বল নিয়ে নিজেই বল করলেন আথানাজেকে।
অনুশীলন ও উইকেট পরিদর্শন পর্ব শেষে বিকেলের দিকে ফিরে গেলেন স্যামিরা। তাদের প্রথম অনুশীলন সেশন শুক্রবার।
আপনার মতামত লিখুন :