পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা
স্পিন সহায়ক উইকেটে চমৎকার বোলিংয়ে দলকে লিড এনে দিলেন নোমান আলি। ব্যাটিংয়ে নেমে পাকিস্তানের সেই স্বস্তি অনেকটাই উবে গেল। আবারও বল হাতে দ্যুতি ছড়ালেন সেনুরান মুথুসামি। স্বাগতিকদের অল্পতে গুটিয়ে লক্ষ্য খুব বড় হতে দিলেন না বাঁহাতি স্পিনার। কিন্তু ফের নোমানের ছোবলে ভালোভাবে দিন শেষ করতে পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা।
লাহোর টেস্টে মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস ২৬৯ রানে গুটিয়ে ১০৯ রানের লিড নেয় পাকিস্তান। দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমে দুইশও করতে পারেনি তারা। ১৬৭ রানে থেমে যাওয়া শান মাসুদের দল সফরকারীদের দিতে পারে ২৭৭ রানের লক্ষ্য।
পাকিস্তানের মাটিতে টেস্টে আড়াইশ রানও তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই কোনো দলের। ২০০০ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে ২২০ রানের লক্ষ্যে জিতেছিল শ্রীলঙ্কা।
রেকর্ড রান তাড়ার কঠিন সেই চ্যালেঞ্জে দিনের শেষ সেশনে ব্যাটিংয়ে নেমে ২ উইকেটে ৫১ রান করেছে প্রোটিয়ারা। এখনও ২২৬ রান দরকার তাদের। উইকেটের যে অবস্থা তাতে, সম্ভাবনার পাল্লা কিছুটা ঝুলে পাকিস্তানের দিকেই।
দক্ষিণ আফ্রিকাকে তিনশর আগে থামিয়ে দেওয়ার কারিগর নোমান ১১২ রানে নেন ৬ উইকেট। টেস্টে এনিয়ে পঞ্চমবার ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিলেন তিনি, ঘরের মাঠে পাকিস্তানের কোনো স্পিনারের যা সর্বোচ্চ।
দ্বিতীয় ইনিংসেও দক্ষিণ আফ্রিকার পড়া দুই উইকেটই নিয়েছেন ৩৯ বছর বয়সী নোমান।
স্পিন স্বর্গে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেওয়া মুথুসামি এবার ধরেন পাঁচ শিকার। পাকিস্তানে এক টেস্টের দুই ইনিংসেই পাঁচ উইকেট নেওয়া দ্বিতীয় সফরকারী বোলার তিনি। ১৯৮৪ সালে করাচিতে এই স্বাদ পেয়েছিলেন ইংলিশ বাঁহাতি স্পিনার নিক কুক।
এই দুজনেরই ম্যাচে শিকার ১১টি করে উইকেট। পাকিস্তানে এক টেস্টে এত উইকেট নিতে পারেননি আর কোনো সফরকারী বোলার।
চমৎকার বোলিংয়ে ৫১ খরচায় ৪ উইকেট নেন সাইমন হার্মার। প্রথম ইনিংসে একটি শিকার ধরেছিলেন এই অফ স্পিনার।
গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ৬ উইকেটে ২১৬ রান নিয়ে খেলতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস দিনের প্রথম সেশনেই গুটিয়ে দেয় পাকিস্তান। আগের দিনের অপরাজিত মুথুসামিকে ফিরিয়ে দেন সাজিদ খান।
কিছুক্ষণ পরই কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কে পা রাখেন ৮১ রান নিয়ে দিন শুরু করা টনি ডি জর্জি। টেস্টে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। তাকে বিদায় করে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন আগের দিন চারটি নেওয়া নোমান।
গত অক্টোবরে টেস্ট দলে ফেরার পর পাঁচ টেস্টেই ইনিংসে পাঁচ উইকেটের স্বাদ পেলেন নোমান।
পরপর দুই ওভারে প্রেনেলান সুব্রায়েন ও কাগিসোর রাবাদাকে বিদায় করে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের ইতি টেনে দেন নোমান ও সাজিদ।
ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তান শিবিরে দ্বিতীয় ওভারেই আঘাত হানেন হার্মার, স্টাম্পড হয়ে শূন্য রানে ফেরেন ইমাম-উল-হাক। কিছুটা সময় উইকেটে কাটানো মাসুদকে দুই অঙ্কে যেতে দেননি হার্মার।
৩৩ রানে ২ উইকেট হারানো দলকে টানার চেষ্টা করেন আবদুল্লাহ শাফিক ও বাবর আজম। ৬ চারে ৪১ রান করা শাফিকের ফিরতি ক্যাচ নিয়ে শিকার ধরা শুরু করেন মুথুসামি।
সাউদ শাকিলকে নিয়ে কিছুক্ষণ প্রতিরোধ গড়েন বাবর। ৫ চারে ৪২ রান করা অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানকে এলবিডব্লিউ করে ইনিংসের একমাত্র পঞ্চাশ ছোঁয়া (৫৫) জুটি ভাঙেন কাগিসো রাবাদা। ৭ চারে ৩৮ রান করা শাকিলকে ফেরান মুথুসামি।
হার্মার ও মুথুসামির স্পিনে এরপর বালির বাঁধের মতো ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং। ১৭ রানে শেষ ৬ উইকেট হারায় দলটি। নোমান আলিকে এলবিডব্লিউ করে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেন মুথুসামি।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ও দলের ব্যাটিং অর্ডারের বড় ভরসা এইডেন মার্করামের স্টাম্প ভেঙে দেন নোমান। পরের ওভারে এই স্পিনার শূন্য রানে বিদায় করেন ভিয়ান মুল্ডারকে।
১৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলের হাল ধরেন রায়ান রিকেলটন ও ডি জর্জি। প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ডি জর্জি ১৬ রানে খেলছেন। ২৯ রানে অপরাজিত আছেন ওপেনার রিকেলটন। তাদের অবিচ্ছিন্ন ৩৩ রানের জুটিতে নিরাপদে দিন শেষ করেছে প্রোটিয়ারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৩৭৮
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৮৪ ওভারে ২৬৯ (আগের দিন ২১৬/৬) (ডি জর্জি ১০৪, মুথুসামি ১১, হার্মার ১৯*, সুব্রায়েন ৪, রাবাদা ০; আফ্রিদি ৫-২-১৫-০, নোমান ৩৫-৩-১১২-৬, সাজিদ ৩৩-২-৯৮-৩, হাসান ৪-২-১৪-০, সালমান ৭-২-২১-১)
পাকিস্তান ২য় ইনিংস: ৪৬.১ ওভারে ১৬৭ (শাফিক ৪১, ইমাম ০, মাসুদ ৭, বাবর ৪২, শাকিল ৩৮, রিজওয়ান ১৪, সালমান ৪, আফ্রিদি ০, নোমান ১১, সাজিদ ১, হাসান ০*; রাবাদা ১০-০-৩৩-১, হার্মার ১৪.১-৩-৫১-৪, মুথুসামি ১৭-১-৫৭-৫, সুব্রায়েন ৫-০-২২-০)
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৭৭) ২২ ওভারে ৫১/২ (রিকেলটন ২৯*, মার্করাম ৩, মুল্ডার ০, ডি জর্জি ১৬*; হাসান ২-০-২-০, নোমান ১১-২-২০-২, সাজিদ ৫-০-২১-০, সালমান ৪-১-৭-১)
আপনার মতামত লিখুন :