আলমারিতে হয়ত সারি সারি পোশাক ঝুলছে। তবুও প্রায়ই মনে হয়, ‘কিছুই পরার নেই’।
একই জামা কয়েকদিন আগেই পরেছেন। প্রিয় জিন্সটির রং বিরক্তিকর লাগছে। আবার অনেক পোশাক হয়ত বহুদিন ধরেই পুরানো মনে হয়।
তাই যতই নতুন পোশাক কেনা হোক না কেন, খুব শিগগিরই সেগুলো নিরস হয়ে যায়। ফ্যাশন দুনিয়ায় এই অনুভূতির একটি নাম আছে। একে বলে ‘ওয়ারড্রোব ফ্যাটিগ’। আর বাংলায় বলা যায় ‘পোশাক ক্লান্তি’।
এই ধারণা ব্যাখ্যা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যক্তিগত স্টাইলিস্ট এবং ‘ওয়ারড্রোব ফ্যাটিগ’ পরামর্শক শে জনসন।
রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তিনি বলেন, “ওয়ারড্রোব ফ্যাটিগ’ ফ্যাটিগ’ হল সেই সময়, যখন নিজের আলমারি খুলে অনুপ্রেরণা খুঁজে পাওয়া যায় না। নিজের কাছে থাকা পোশাকগুলো হয়ত বর্তমান জীবনধারা, বয়স, কিংবা মনের প্রতিফলন ঘটায় না। আবার অনেক সময় কেবল সাজানোর নতুন ধারণার অভাবেই পোশাকগুলো নিরস লাগে।”
কেন হয় এই পোশাক ক্লান্তি?
কানাডাভিত্তিক ফ্যাশন-বিষয়ক কনটেন্ট নির্মাতা ম্যাডিসন কলিঞ্জ মনে করেন- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এই সমস্যার একটি বড় কারণ।
তার ভাষায়, “কেউ একটি পোশাক পোস্ট করলেই সেটা কিনে ফেলি। তবে সেটি নিজস্ব স্টাইলের সঙ্গে মেলে কিনা তা ভাবি না। ফলে সেটি আলমারির এক কোণে পড়ে থাকে। একবার হয়ত পরাও হয়, প্রশংসাও পাই। তারপর আর সেটা ব্যবহার করতে ইচ্ছে করে না।”
অর্থাৎ, হুটহাট কেনাকাটা এবং প্রবণতা অনুসরণই পোশাক ক্লান্তিকে বাড়িয়ে দেয়।
যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ফ্যাশন স্টাইলিস্ট ও কনটেন্ট নির্মাতা সিসি ব্রিয়ান বলেন, “যখন অতিরিক্ত কেনাকাটা করা হয়, তখন সমস্যা আরও বাড়ে। একসময় আলমারিতে পোশাক জমতে থাকে, তবে কোনোটা ভালো লাগে না। তখন মানুষ মনে করে কিছুই পরার নেই।”
সমাধান কোথায়?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমাধান হল সচেতনতা, পরিকল্পনা এবং সৃজনশীলতা। নতুন পোশাক কেনাই সমস্যার সমাধান নয়। বরং পুরানো পোশাককেই নতুনভাবে ব্যবহার করা শিখতে হবে।
এক মাসের কেনাকাটা বিরতি: সিসি ব্রিয়ানের মতে, “যারা নিয়মিত এই সমস্যায় ভুগছেন, তাদের আমি অন্তত এক মাস নতুন কিছু না কেনার পরামর্শ দেব। কিছু চাইলে নোটবুকে লিখে রাখা উচিত। এক মাস পর দেখবেন অনেক কিছুই আর মনে নেই। এতে অযথা খরচও কমে যাবে।”
এই কৌশল মানুষকে অতিরিক্ত কেনাকাটা থেকে বিরত রাখে এবং আলমারির পুরানো পোশাকগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে সাহায্য করে।
আলমারি পরিষ্কার ও নিজের পোশাককে নতুনভাবে দেখা: ম্যাডিসন কলিঞ্জের মতে, “প্রথমে নিজের আলমারি গুছিয়ে ফেলতে হবে। যেসব পোশাক একেবারেই ব্যবহার হয় না, সেগুলো বাদ দিতে হবে। এতে জায়গা খালি হবে এবং পোশাক বাছাই সহজ হবে। তারপর বাকি পোশাকগুলোর সঙ্গে নতুনভাবে মিলিয়ে দেখতে হবে।”
তিনি বলেন, “আপনার কাছে হয়ত সব প্রয়োজনীয় পোশাকই আছে। কেবল নতুনভাবে মিলিয়ে পরার অভ্যাস গড়তে হবে।”
কলিঞ্জ আরও একটি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছেন ‘৩৩৩ মেথড’। অর্থাৎ তিনটি শার্ট, শাড়ি বা কামিজ, তিনটি প্যান্ট এবং তিন জোড়া জুতা নিয়ে বিভিন্নভাবে মেলানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। এতে নতুনত্ব আসবে এবং একঘেয়েমি কাটবে।
স্থায়ী পোশাকে বিনিয়োগ: শে জনসনের মতে, “কিছু নির্দিষ্ট পোশাক সব সময়ই কাজে দেয়। যেমন- এক জোড়া মানানসই জিন্স, একটি সাদা শার্ট বা টপ, নিরপেক্ষ রংয়ের ব্লেজার, কালো পোশাক, একটি বহুমুখী পাতলা ও হালকা জ্যাকেট আর একটি বহুমুখী জুতা।”
এগুলো দিয়ে অসংখ্য ভিন্ন ভিন্ন সাজ তৈরি করা যায়।
তিনি বলেন, “কিছু স্থায়ী পোশাকে বিনিয়োগ করলে ‘কিছু পরার নেই’ এই অনুভূতি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।”
সাজসজ্জার মাধ্যমে নতুনত্ব: অনেক সময় একই পোশাককে বারবার ব্যবহার করা যায় কেবল ভিন্ন ভিন্ন অলঙ্কার বা সাজসজ্জার মাধ্যমে।
সিসি ব্রিয়ান বলেন, “একই টি-শার্ট, টপ, কুর্তি, কামিজ, শাড়ি, জিন্স প্রতিদিন পরলেও যদি নতুন নেকলেস, স্কার্ফ বা বেল্ট ব্যবহার করেন, তাহলে সেটি একেবারে আলাদা দেখাবে।”
তার মতে, “পোশাকের তুলনায় সাজসজ্জার জিনিস কেনা কম ঝামেলার এবং কম ব্যয়বহুল।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতা: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফ্যাশনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। আর এখানেই অনেক বিভ্রান্তিরও সৃষ্টি হয়।
ব্রিয়ান বলেন, “খুব বেশি অনুপ্রেরণা কখনও কখনও বিভ্রান্ত করে। তাই যারা পছন্দের স্টাইলের সঙ্গে মেলে, তাদেরই অনুসরণ করা উচিত।”
এতে একদিকে অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা কমবে, অন্যদিকে নিজের আলমারির পোশাকগুলোকেও নতুনভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
পোশাক বাছাই আনন্দের বিষয় হওয়া উচিত: বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন, পোশাক বাছাই মানে কেবল ‘কী পরব’ তা নয়, বরং নিজেকে উপস্থাপনের আনন্দও আছে।
শে জনসন বলেন, “‘ওয়ারড্রোব ফ্যাটিগ’ ফ্যাটিগ’কে ব্যর্থতা মনে করবেন না, বরং এটিকে নিজেকে নতুনভাবে সাজানোর সুযোগ হিসেবে দেখুন।”
আরও পড়ুন
কাপড় বেশি হয়ে গেলে যেভাবে গুছিয়ে রাখবেন
আপনার মতামত লিখুন :