
জিম্বাবুয়ে-আফগানিস্তান
বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে ফিরলেন রাহমানউল্লাহ গুরবাজ। সঙ্গে ইব্রাহিম জাদরানের পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসে ২০০ ছাড়ানো সংগ্রহ গড়ল আফগানিস্তান। রান তাড়ায় সিকান্দার রাজা, ব্রায়ান বেনেটদের ব্যাটে জবাবটা ভালোই দিচ্ছিল জিম্বাবুয়ে। কিন্তু শেষ দিকে একের পর এক উইকেট হারিয়ে পেরে উঠল না স্বাগতিকরা।
হারারেতে রোববার উত্তেজনায় ঠাসা তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ৯ রানে জিতেছে আফগানিস্তান। নিয়মিত অধিনায়ক রাশিদ খান ও পেস বোলিং অলরাউন্ডার আজমাতউল্লাহ ওমারজাইকে বিশ্রাম দেওয়ার ম্যাচে ২১০ রানের বড় পুঁজি গড়ে তারা। লক্ষ্য তাড়ায় ১৭ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭২ রান থেকে ২০১ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
দুই ইনিংস মিলিয়ে এদিন রান হয়েছে ৪১১। আফগানিস্তান-জিম্বাবুয়ের টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথম দেখা গেল চারশ রান। আগের সর্বোচ্চ ছিল এক দশক পুরনো ৩৮১।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাতটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে সবকটিতে হারল জিম্বাবুয়ে। তিন ম্যাচের সিরিজে আফগানদের বিপক্ষে এনিয়ে তৃতীয়বার হোয়াইটওয়াশড হলো তারা।
আফগানদের জয়ে বড় অবদান রেখে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে নেন গুরবাজ। ৫টি ছক্কা ও ৮টি চারে ৪৮ বলে ৯২ রানের খুনে ইনিংস খেলেন এই ওপেনার। ৭ চারে ৪৯ বলে ৬০ রান করেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ইব্রাহিম।
এই দুইজনের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ১৫৯ রান। এই সংস্করণে আফগানিস্তানের যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০১৯ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে উসমান গনি ও হাজরাতউল্লাহ জাজাইয়ের ২৩৬ রানের শুরুর জুটি সেরা।
জিম্বাবুয়ের হয়ে ২ ছক্কা ও ৭টি চারে ২৯ বলে ৫১ রান করেন অধিনায়ক রাজা। ৪৭ রান করতে ২ ছক্কা ও ৩টি চার মারেন বেনেট। এছাড়া ৫ ছক্কায় ১৫ বলে ৩৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন রায়ান বার্ল।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ঝড় তোলেন গুরবাজ ও ইব্রাহিম। প্রথম ওভারে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে তিনটি চার ও একটি ছক্কা মেরে মোট ১৯ রান নেন গুরবাজ। চতুর্থ ওভারে টিনোটেন্ডা মাপোসাকে টানা চারটি বাউন্ডারি মারেন ইব্রাহিম, গুরবাজ মারেন একটি ছক্কা।
পরের ওভারে গুরবাজের ফিরতি ক্যাচ নিতে পারেননি বোলার ব্র্যাড ইভান্স। সেটির চড়া মূল্য দিতে হয় তাদের।
পাওয়ার প্লেতে ৭৩ রান তোলা আফগানিস্তান ১০ ওভারে করে ৯৯। ২৭ রানে জীবন পেয়ে ৩০ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন গুরবাজ। পঞ্চাশ ছুঁতে ইব্রাহিমের লাগে ৩৬ বল।
চতুর্দশ ওভারে ঝড় বয়ে যায় রায়ান বার্লের ওপর দিয়ে, তিনটি করে চার ও ছক্কায় মোট ৩০ রান নেন গুরবাজ। তার সেঞ্চুরি যখন মনে হচ্ছিল স্রেফ সময়ের ব্যাপার, তখনই রাজার দুর্দান্ত ক্যাচে হতাশা নিয়ে ফেরেন তিনি। পরের ওভারে ক্যাচ দিয়ে থামেন ইব্রাহিমও।
সেদিকউল্লাহ আতালের ১৫ বলে অপরাজিত ৩৫ রানের ক্যামিওতে দুইশ ছাড়ায় আফগানিস্তানের রান।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই জোড়া ধাক্কা খায় জিম্বাবুয়ে। তৃতীয় ওভারে ডিওন মায়ার্স ও ব্রেন্ডান টেইলরকে বিদায় করেন ফাজালহাক ফারুকি।
১৯ রানে ২ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন বেনেট ও রাজা। পঞ্চম ওভারে ফারিদ আহমাদকে চার মারেন রাজা, একটি করে ছক্কা-চার হাঁকান বেনেট। পাওয়ার প্লে শেষে জিম্বাবুয়ের রান ৪৮।
আহমাদজাইয়ের ওভারে একটি ছক্কা মারেন বেনেট, চার ও ছক্কা হাঁকান রাজা। ১০ ওভারে ৯২ রান তোলে আফ্রিকার দলটি।
পরের ওভারেই বিদায় ঘণ্টা বাজে রাজার। মোহাম্মাদ নাবিকে ছক্কা ও চারের পর বোল্ড হয়ে যেন তিনি। ভাঙে ৪৮ বল স্থায়ী ৮৫ রানের জুটি। এক ওভার পর ড্রেসিং রুমে ফেরেন বেনেটও।
শারাফউদ্দিনকে ছক্কায় উড়িয়ে রানের খাতা খোলা বার্ল স্পিনার নাবিকে মারেন দুটি ছক্কা। আহমাদজাইয়ের পর মুজিবকে ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই বোল্ড হয়ে যান তিনি।
শেষ চার ওভারে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল ৪৭ রান, হাতে ছিল ৫ উইকেট। পরে সমীকরণ দাঁড়ায় ১৮ বলে ৩৯। বাকি পাঁচ উইকেট হারিয়ে শেষ তিন ওভারে ৩০ রান করতে পারে তারা।
তিন ফিফটিতে সর্বোচ্চ ১৬৯ রান করে সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতে নেন ইব্রাহিম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ২১০/৩ (গুরবাজ ৯২, ইব্রাহিম ৬০, সেদিকউল্লাহ ৩৫, শাহিদউল্লাহ ১০, নাবি ১; মাসাকাদজা ৩-০-৩৩-০, এনগারাভা ৪-০-৪০-১, ইভান্স ৪-০-৩৩-২, মাপোসা ২-০-৩৩-০, রাজা ৪-০-২০-০, বার্ল ৩-০-৪৮-০)
জিম্বাবুয়ে: ২০ ওভারে ২০১ (বেনেট ৪৭, মায়ার্স ৫, টেইলর ৪, রাজা ৫১, বার্ল ৩৭, মুসেকিওয়া ২৮, মাডান্ডে ৪, ইভান্স ১, মাপোসা ৪, মাসাকাদজা ৫*, এনগারাভা ৫; ফারুকি ৪-০-২৯-২, মুজিব ৪-০-৩০-১, ফারিদ ৩-০-৩৮-২, সারাফউদ্দিন ৩-০-২৯-০, আহমাদজাই ৪-০-৪-৩, নাবি ২-০-২৮-১)
ফল: আফগানিস্তান ৯ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রাহমানউল্লাহ গুরবাজ
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজ ৩-০তে জয়ী আফগানিস্তান
ম্যান অব দা সিরিজ: ইব্রাহিম জাদরান
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                        
                        
                        
                        
                        
                        
                        
আপনার মতামত লিখুন :