
তার নামটিই আলোর প্রতিশব্দ। নামেই মিশে আছে জ্যোতি। তবে নাম তো মানুষকে বড় করে না, নামের স্বার্থকতা প্রমাণ করতে হয় কাজ দিয়ে। দিপ্তি শার্মা সেটি করে আসছেন অনেক দিন ধরেই। তবু পাদপ্রদীপের আলো তাকে স্পর্শ করেছে কমই। এবার এমন এক মঞ্চে এতটা অসাধারণ কীর্তি গড়লেন, দিপ্তির সেই রোশনাই ছড়িয়ে পড়ছে ক্রিকেট বিশ্বময়।
উইমেন’স ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের গৌরবময় জয়ে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে প্লেয়ার অব দা ম্যাচ হয়েছেন শেফালি ভার্মা। তবে পুরস্কারটি যদি দিপ্তি পেতেন, তাহলেও দ্বিমত করার লোক হয়তো খুব বেশি থাকত না। অসাধারণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন তিনিও, ছেলে ও মেয়ে মিলিয়েই বিশ্বকাপে যে কীর্তি নেই অন্য কোনো ক্রিকেটারের।
নাভি মুম্বাইয়ে রোববার ফাইনালে যখন ভারতের ইনিংস একটু নড়বড়ে, দিপ্তির ৫৮ বলে ৫৮ রানের ইনিংস বড় ভূমিকা রাখে দলকে তিনশর কাছে এগিয়ে যেতে। পরে বল হাতে তিনি শিকার করেন ৩৯ রানে ৫ উইকেট।
বিশ্বকাপ ফাইনালে তো বটেই, বিশ্বকাপের নকআউট ম্যাচে এমন কীর্তি একমেবাদ্বিতীয়ম। ছেলে ও মেয়েদের বিশ্বকাপ মিলিয়ে নকআউট পর্বে একই ম্যাচে ফিফটি ও ৫ উইকেটের যুগলবন্দি নেই আর কোনো ক্রিকেটারের। শুধু নারী বিশ্বকাপ বিবেচনায় নিলেন, প্রাথমিক পর্ব ও নকআউট মিলিয়েই এমন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স ইতিহাসে প্রথম।
নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে ৫ উইকেট শিকার করা দ্বিতীয় বোলার তিনি। ২০১৭ আসরে ভারতকেই শেষ সময়ে গুঁড়িয়ে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন ইংলিশ পেসার আনিয়া শ্রাবসোল।
ম্যাচ-সেরা না হলে অবশ্য আক্ষেপ থাকার কথা নয় দিপ্তির। আসরের সেরা ক্রিকেটার যিনি, স্রেফ এক ম্যাচের সেরা নিয়ে তিনি ভাববেন কেন! হ্যাঁ, আসরজুড়ে দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট স্বীকৃতি পেয়েছেন ২৮ বছর বয়সী অলরাউন্ডারই।

বিশ্বকাপে এবার আসরের সর্বোচ্চ ২২ উইকেট নিয়েছেন এই অফ স্পিনার। বোলিংয়ে ডানহাতি হলেও ব্যাটিংয়ে তিনি বাঁহাতি। তিন ফিফটিতে রান করেছেন ৯০.৩৩ স্ট্রাইক রেটে ২১৫।
এক আসরে ২০ উইকেট আর ২০০ রানের অলরাউন্ড কীর্তি নেই বিশ্বকাপ ইতিহাসে আর কারও।
ফাইনালটি অবশ্য তার জন্য বিভীষিকায় পরিণত হতে পারত। আনেরি ডার্কসেনের ক্যাচ ছেড়েছিলেন তিনি। লরা উলভার্টের সঙ্গে ডার্কসেনের জুটি তখন ভারতের জন্য প্রবল হুমকি হয়ে উঠছে। প্রায়শ্চিত্তও করেন তিনি দ্রুতই। ক্রস সিম ইয়র্কারে বোল্ড করে দেন ডার্কসেনকে। পরে উলভার্টকেও ফিরিয়ে ভারতের মূল বাধাও সরিয়ে দেন।
দলের প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফি, সেখানে ইতিহাস গড়া পারফরম্যান্সে অবদান রাখার পর দিপ্তি ছিলেন উচ্ছ্বাসে উদ্ভাসিত।
“সত্যি বলতে, স্বপ্নের মতো অনুভূতি হচ্ছে। এখনও আবেগ থেকে বের হতে পারছি না। বিশ্বকাপ ফাইনালে এভাবে অবদান রাখতে পেরে দারুণ লাগছে। আমরা সবসময়ই ভেবেছি, প্রতিটি ম্যাচের প্রাপ্তিগুলোকে কীভাবে সামনে বয়ে নেব। দল হিসেবে আমরা দারুণ খুশি।”
“যখন যেটাই করি, পরিস্থিতি যেমনই থাকুক, দায়িত্ব আমি সবসময় উপভোগ করি। আজকেও মাঠে নেমে চেয়েছি পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলতে। এরকম মঞ্চে এমন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দেখানোর চেয়ে অসাধারণ অনুভূতি তো আর হতে পারে না।”
প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শেষটায় নিজে থেকেই আবার মাইক্রোফোন চেয়ে নিয়ে তিনি বললেন, “আমার এই ট্রফি (টুর্নামেন্ট-সেরার) উৎসর্গ করছি আমার বাবা-মাকে।”
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                        
                        
                        
                        
                        
                        
                        
আপনার মতামত লিখুন :