
ফাইনালের ফয়সালা শেষে ভারতীয়রা যখন মাঠে মেতে উঠেছেন বাঁধনহারা উল্লাসে, কিছুক্ষণের জন্য ক্যামেরায় ফুটে উঠল দক্ষিণ আফ্রিকার ডাগআউট। লরা উলভার্ট সেখানে মূর্তির মতো বসে। নিশ্চল, স্তব্ধ। দৃষ্টিতে শূন্যতা। হাহাকার জাগানো ছবি যেন। অথচ উচ্ছ্বাসের স্রোতে এ দিন ভাসতে পারতেন তিনিও। চেষ্টার তো কমতি রাখেননি!
টুর্নামেন্টে রানের রেকর্ড গড়েছেন। সেমি-ফাইনালে অতিমানবীয় এক ইনিংস খেলেছেন। ফাইনালেও ৬০ হাজার দর্শকের নীল সমুদ্রের গর্জনকে উপেক্ষা করে দলকে তীরে নেওয়ার লড়াই করেছেন। শেষটায় পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক। একা আর কত!
সতীর্থরা পারেননি তার লড়াইয়ে শামিল হতে। শেষ পর্যন্ত সঙ্গী তাই আরও একবার হৃদয় ভাঙার যন্ত্রণা। এই নিয়ে টানা তিন বছর, টানা তিনটি বিশ্বকাপ!
দুটি টি-টোয়েন্টি ও একটি ওয়ানডে বিশ্বকাপে টানা সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী উলভার্ট। কিন্তু তিনবারই হাতছানি দিয়ে মিলিয়ে গেল ট্রফি। তিনবারই শিরোপার মঞ্চে তার চেহারায় আঁধার। তিনবারই রানার্স আপ!
২০২৩ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আসরের সর্বোচ্চ ২৩০ রান করেছিলেন তিনি। দেশের মাঠের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ফাইনালে ১৯ রানে হেরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ফাইনালেও তিনি করেছিলেন দলের সেরা ৬১ রান।
২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তিনি করেন ২২৩ রান। আর কোনো ব্যাটার ১৯০ রানও করতে পারেননি। ফাইনালে তার ব্যাট থেকে আসে ৩৩ রান, যথারীতি যা দলের সর্বোচ্চ। কিন্তু নিউ জিল্যান্ডের কাছে ৩২ রানে হেরে দল আবার রানার্স আপ।
এবারের বেদনার তীব্রতা হয়তো আরও বেশি। সেটি কেবল টাটকা বলেই নয়, পারফরম্যান্সের বিশালত্বের দিক থেকেও। ৯ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরি আর ৩ ফিফটিতে ৫৭১ রান করেছেন তিনি ৭১.৩৭ গড় ও প্রায় ৯৯ স্ট্রাইক রেটে। নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপের এক আসরে যা সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
উলভার্ট পেরিয়ে গেছেন ২০২২ বিশ্বকাপে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রানকে।
ওই বিশ্বকাপে হিলির অসাধারণ এক কীর্তিও মনে করিয়ে দিয়েছেন উলভার্ট। নিউ জিল্যান্ডে সেই আসরে সেমি-ফাইনালে ১০৭ বলে ১২৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন হিলি, ফাইনালে করেছিলেন ১৩৮ বলে ১৭০। ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালে যা সেরা পারফরম্যান্স। এবার উলভার্ট সেমি-ফাইনালে করেছেন ১৪৩ বলে ১৬৯। ফাইনালে রোববার খেললেন ৯৮ বলে ১০১ রানের ইনিংস।

তবে সবচেয়ে বড় অমিলটাই উলভার্টের আক্ষেপের সাগর। হিলির অমন পারফরম্যান্সে শিরোপা জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু উলভার্টের রেকর্ড গড়া পারফরম্যান্সেও দক্ষিণ আফ্রিকা রানার্স আপ। আবারও।
তার বয়স যদিও এখনও মোটে ২৬। সময় পড়ে আছে সামনে অনেক। এখনই তিনি খেলাটির গ্রেট ব্যাটার হয়ে উঠেছেন। মাত্র ১১১ ওয়ানডেতেই করেছেন ১১ সেঞ্চুরি ও ৩৮ ফিফটি। ৫০.৬৯ গড়ে ৫ হাজারের বেশি রান। টি-টোয়েন্টি রেকর্ডও দারুণ, টেস্টের শুরুটা ভালো করেছেন। এই পথে থাকলে একদিন কিংবদন্তিও হয়ে উঠবেন।
তবে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য প্রাপ্তির চেয়ে তো বর্তমানের অপূর্ণতাই পোড়ায় বেশি!
ম্যাচ শেষ হওয়ার পর তার অভিব্যক্তিতেই ফুটে উঠছিল সবকিছু।
অধিনায়ককে অবশ্য দ্রুতই সামলে নিতে হয় নিজেকে। দলটাকেও তো সামাল দিতে হবে! ইংল্যান্ডের কাছে ৬৯ রানে অলআউট হয়ে ১০ উইকেটের পরাজয়ে আসর শুরু করেছিলেন তারা। সেখান থেকে শেষ পর্যন্ত ফাইনাল খেলতে পেরে গর্বের কথাই শোনালেন তিনি পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে।
“এই দলকে নিয়ে এর চেয়ে বেশি গর্বিত আর হতে পারতাম না। আসরজুড়ে দারুণ খেলেছি, তবে আজকে ভারতের কাছে উড়ে গেছি। পরাজিত দলে থাকা দুর্ভাগ্যজনক, তবে অবশ্যই আমরা এখান থেকে আরও সমৃদ্ধ হব।”
“আমাদের দলের অনেকের জন্যই টুর্নামেন্ট দারুণ কেটেছে। যে স্থৈর্য আমরা দেখিয়েছি এই টুর্নামেন্টে, দল নিয়ে আমি গর্বিত।”
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                        
                        
                        
                        
                        
                        
                        
আপনার মতামত লিখুন :