
প্রথম ইনিংসে ১৩, পরের ইনিংসে ০। জাতীয় লিগের প্রথম রাউন্ডে মুমিনুল হক ছিলেন পুরোপুরি ব্যর্থ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সামনের টেস্ট সিরিজের আগে তার ছন্দে ফেরা ছিল জরুরি। দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম দিনেই সেই দাবি মিটালেন অভিজ্ঞ ব্যাটস্যম্যান। দিনের খেলা সবটুকু হলে হয়তো সেঞ্চুরিও পেয়ে যেতেন তিনি।
মুমিনুলের সতীর্থ সাদিকুর রহমান অবশ্য সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন এ দিনই। দিনের আরেক ম্যাচে সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও মাহফিজুল ইসলাম রবিন। ময়মনসিংহ বিভাগের হয়ে দুজন গড়েছেন দুইশ ছাড়ানো উদ্বোধনী জুটি।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের আগে ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হলেও বল হাতে ১০ ওভারেই তিনটি উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ভালো বোলিং করেছেন টেস্ট দলে জায়গা প্রত্যাশী ইবাদত হোসেন চৌধুরি ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ। ব্যর্থ হয়েছেন নাজুমুল হোসেন শান্ত।
সাদিকুরের সেঞ্চুরি, অপেক্ষায় মুমিনুল
কক্সবাজার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বরিশাল বিভাগের বিপক্ষে প্রথম দিনে ৪ উইকেটে ২৬০ রান তোলে চট্টগ্রাম বিভাগ।
ভেজা মাঠের কারণে খেলা শুরু হয় ৪৫ মিনিট দেরিতে। টসজয়ী চট্টগ্রামকে দারুণ শুরু এনে দেন সাদিকুর রহমান ও মাহমুদুল হাসান জয়। উদ্বোধনী জুটিতে দুজন তোলেন ৮৯ রান।
এই জুটি ভাঙেন অপ্রত্যাশিত এক বোলার। অনিয়মিত বোলার শামসুর রহমানের বল শর্ট লেগে তুলে আউটহন জয়। টেস্ট দলে জায়গা হারানো ওপেনার ফেরেন ৩৫ রানে।
দ্বিতীয় উইকেটে সাদিকুর ও মুমিনুল গড়েন ১৪৩ রানের জুটি।
সাদিকুর শতরান পূরণ করেন ১৫৯ বলে। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের তৃতীয় সেঞ্চুরি এটি।
৩২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের ইনিংস থামে ৮ চার ও ৫ ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ১২২ রানে।
এরপর অধিনায়ক শাহাদাত হোসেন (২) ও আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ইয়াসির আলি চৌধুরি (০) ফেরেন অল্প সময়ের মধ্যে।
মুমিনুল ফিফটি করেন ৯১ বলে। এরপর বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটতে থাকেন শতরানের দিকে। কিন্তু তাকে থামতে হয় আলোকস্বল্পতায়। অপরাজিত থাকেন তিনি ১০ চারে ১২৯ বলে ৮৪ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চট্টগ্রাম বিভাগ ১ম ইনিংস: ৭১ ওভারে ২৬০/৪ (সাদিকুর ১২২, জয় ৩৫, মুমিনুল ৮৪*, শাহাদাত ২, ইয়াসির ৮, ইরফান ০*; ইয়াসিন ১০-২-৩৮-১, সালমান ৪-০-২৩-০, রুয়েল ১৩-১-৫৫-১, মইন ১৭-৩-৪৮-০, তানভির ১৬-২-৩৮-১, শামসুর ৫-০-২৫-১, ইফতেখার ৫-১-২০-০, তাসামুল ১-০-৬-০)।
মাহফিজুল-নাঈমের সেঞ্চুরি, রংপুরের ১০ জনের বোলিং
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সাত ম্যাচে মাহফিজুল ইসলাম রবিনের সর্বোচ্চ রান ছিল স্রেফ ৪৫। আগের রাউন্ডে প্রথম ইনিংসে আউট হন তিনি শূন্যে। তরুণ এই ব্যাটসম্যান এবার প্রথম ফিফটি করে সেটিকে রূপ দিলেন প্রথম সেঞ্চুরিতে। তার সঙ্গে সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন মোহাম্মাদ নাঈম শেখও।
কক্সবাজার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে রংপুর বিভাগের বিপক্ষে ৮২ ওভার খেলে ময়মনসিংহ বিভাগ তোলে ২ উইকেটে ২৮১ রান।
টসজয়ী ময়মনসিংহকে অসাধারণ শুরু এনে দেন নাঈম ও মাহফিজুল। লাঞ্চের আগে ৯৯ রান তোলেন দুজন। দুজনের জুটি পরে শতরান পেরিয়ে চা-বিরতির আগেই ছাড়িয়ে যায় দুইশ।
মাহফিজুলের প্রথম পঞ্চাশ আসে ৮০ বলে, নাঈমের ফিফটি হয় ৯৫ বলে। এরপর আগ্রাসী রূপে আবির্ভুত হয়ে নাঈম পরের পঞ্চাশ করে ফেলেন স্রেফ ৩৮ বলেই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার চতুর্থ শতরান এটি।
শেষ পর্যন্ত এই জুটি থামে ২২০ রানে। নাঈম ফেরেন ১১১ রান করে।
মাহফিজুল শতরানে পা রাখেন ১৮৮ বল খেলে। ১৩ চার ও ২ ছক্কায় ১২৭ রান করে আউট হন ২১ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
এরপর আইচ মোল্লা ও আব্দুল মজিদ সাবধানী ব্যাটিংয়ে পার করে দেন দিন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ময়মনসিংহ বিভাগ: ৮২ ওভারে ২৮১/২ (মাহফিজুল ১২৭, নাঈম শেখ ১১১, আইচ ২৩*, মজিদ ৮*; সাকলাইন ১০-১-২৭-০, মেহেদি ১১-৩-৩২-০, আলাউদ্দিন ৭-০-৩৫-০, আল মামুন ৪-২-১২-০, নাসির ৮-০-৪৮-০, হাশিম ২১-৪-৪০-১, তানবীর ১১-০-৪২-০, জাভেদ ৫-১-১৫-১, নাঈম ২-০-৫-০, আকবর ৩-০-১৬-০)।
মিরপুরে ১৩ উইকেটের দিন
কদিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। সেসবের রেশ পুরোপুরি মিলিয়ে না যেতেই ব্যাটসম্যানদের জন্য আরেকটি কঠিন দিন উপহার দিল এখানকার ২২ গজ। খুলনা বিভাগ ও রাজশাহী বিভাগের ম্যাচে ৬৫ ওভারেই পতন হয় ১৩ উইকেটের।
খুলনার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপ গুটিয়ে যায় মাত্র ১২১ রানেই। রান তাড়ায় রাজশাহী ৩ উইকেটে ৮৭ রান তোলার পর আলোকস্বল্পতা ও বৃষ্টির কারণে খেলা হয়নি আর।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনা ১০ ওভারের মধ্যেই হারায় তিন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার, এনামুল হক ও মোহাম্মদ মিঠুনকে। পরের ব্যাটসম্যানরাও পারেননি তেমন কিছু করতে।
জাতীয় দলের দায়িত্ব শেষে জাতীয় লিগে ফিরে মেহেদী হাসান মিরাজ আউট হন ২ রানেই। অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার জিয়াউর রহমান একটি করে ছক্কা ও চারে ২১ রান করে রান আউট হন। দলের সর্বোচ্চ ২৩ রান আসে ৯ নম্বরে নামা মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরির ব্যাট থেকে।
তিন উইকেট শিকার করেন বাঁহাতি স্পিনার নিহাদ-উজ-জামান। শেষ দিকে তিন ওভার বোলিং করেই তিন উইকেট নেন অফ স্পিনার এসএম মেহেরব হাসান।
ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ মিরাজ বোলিংয়ে নতুন বল হাতে দ্রুতই দলকে এনে দেন দুটি উইকেট। নিজের প্রথম দুই ওভারেই বিদায় করে দেন তিনি আগ্রাসী হাবিবুর রহমান সোহান ও নাজমুল হোসেন শান্তকে।
ওপেনার সাব্বির হোসেন সহজাত আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে তিনটি ছক্কা মারেন মিরাজকে। তবে তাকে ৩৯ রানে ফিরিয়ে শোধ তোলেন এই অফ স্পিনার।
এরপর প্রিতম কুমার ও সাব্বির রহমানের জুটি সামাল দেয় বিপর্যয়। আবহাওয়ার বাগড়ায় খেলা শেষ হয় আগেভাগেই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
খুলনা বিভাগ ১ম ইনিংস: ৪৪.৫ ওভারে ১২১ (এনামুল ১২, সৌম্য ৬, অমিত ১৪, মিঠুন ২, ইমরানউজ্জামান ১৭*, মিরাজ ২, জিয়াউর ২১, নাহিদুল ৯, মৃত্যুঞ্জয় ২৩, টিপু ০, হালিম ৪*; নাহিদ রানা ১২-৩-২৮-১, ওয়ালিদ ৪-১-১২-১, সানজামুল ১৪-১-৩৬-১, নিহাদ ১১.৫-২-৩০-৩, মেহেরব ৩-২-৫-৩)।
রাজশাহী বিভাগ ১ম ইনিংস: ২০ ওভারে ৮৭/৩ (সোহান ৫, সাব্বির হোসেন ৩৯, শান্ত ২, প্রিতম ২০*, সাব্বির রহমান ২০*; হালিম ১-০-৬-০, মিরাজ ১০-০-৪২-৩, টিপু ৭-০-২৩-০, মৃত্যুঞ্জয় ২-০-১৫-০)।
মাহিদুলের লড়াই, ইবাদতের ৩ উইকেট
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আউটার স্টেডিয়ামে আগুনঝরা বোলিং উপহার দেন ইবাদত হোসেন ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ। বৃষ্টিবিঘ্নিত দিনে সিলেট বিভাগের বিপক্ষে ৪৩.১ ওভারে ৫ উইকেটে ১২০ রান তোলে ঢাকা বিভাগ।
বৃষ্টির কারণে খেলা শুরু দয় দুপুর ১টায়। নতুন বলে ঢাকাকে নাড়িয়ে দেন সিলেটের দুই পেসার। প্রথম ওভারেই রনি তালুকদারকে ফেরান ইবাদত। পরের ওভারে আনিসুল ইসলামকে বোল্ড করেন খালেদ।
খালেদ পরে ফেরান আশিকুর রহমান শিবলিকে। তিন চার ও এক ছক্কায় ২০ রান করা জিসান আলমকে থামান ইবাদত।
৫০ রানে ৪ উইকেট হারানো দলের হয়ে প্রতিরোধ গড়েন মার্শাল আইয়ুব ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। তবে ৫১ রানের জুটি ভাঙেন ইবাদত। ৭২ বলে ২৮ রান করে ফেরেন মার্শাল।
আলোকস্বল্পতায় আগেই খেলা শেষ হওয়ার আগে আর উইকেট পড়তে দেননি মাহিদল ও অভিজ্ঞ তাইবুর। টেস্ট দলে জায়গাপ্রত্যাশী মাহিদুল অপরাজিত থাকেন ১০১ বলে ৩৬ রান করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ঢাকা বিভাগ: ৪৩.১ ওভারে ১২০/৫ (রনি ৫, আনিসুল ০, আশিকুর ১৪, জিসান ২০, মার্শাল ২৮, মাহিদুল ৩৬*, তাইবুর ১২*; ইবাদত ১২-৩-৪৯-৩, খালেদ ১০-২-২৫-২, তোফায়েল ৬-১-২২-০, নাবিল ১৪-৪-১৯-০, শাহানুর ১.১-০-৩-০)।
আপনার মতামত লিখুন :