
রান তাড়ায় ৩৯ থেকে ওটনিয়েল বার্টমানকে টানা তিনটি চার মেরে ফিফটি পূর্ণ করলেন বাবর আজম। আগের ম্যাচে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির সফলতম ব্যাটসম্যান হয়ে যাওয়া তারকা এবার গড়লেন আরেকটি রেকর্ড। হারে শুরুর পর টানা দুই জয়ে সিরিজ জিতে নিল পাকিস্তান।
লাহোরে শনিবার তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পাকিস্তানের জয় ৪ উইকেটে। তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতল সালমান আলি আগার দল।
এবারও পাকিস্তানের জয়ের ভিত গড়ে দেন মূলত বোলাররা। আগের ম্যাচে ১১০ রানে অলআউট হওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা এবার শূন্য রানে ২টি, ৪২ রানে ৪টি ও ৭৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে। কর্বিন বশের ২৩ বলে অপরাজিত ৩০ রানের ক্যামিওতে ১৩৯ রানের পুঁজি গড়তে পারে তারা।
পাকিস্তান শেষ দিকে কয়েকটি উইকেট হারালেও লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে এক ওভার বাকি থাকতে।
৯ চারে ৪৭ বলে ৬৮ রানের চমৎকার ইনিংস খেলেন বাবর। টি-টোয়েন্টিতে ১৩ ইনিংস পর পঞ্চাশ ছুঁয়ে ম্যাচ-সেরার স্বীকৃতিও পান সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক।
এই সংস্করণে সবচেয়ে বেশি পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসের রেকর্ডও নিজের করে নিলেন তিনি (৪০টি), ছাড়িয়ে গেলেন ভারতের ভিরাট কোহলিকে (৩৯টি)।
আগের ম্যাচে আরেক ভারতীয় তারকা রোহিত শার্মাকে ছাড়িয়ে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড গড়েন বাবর।
স্ট্রাইক রেটের দুর্বলতার কারণে টি-টোয়েন্টি দল থেকে বাদ পড়ার পর এই সিরিজ দিয়েই ১০ মাস পর ফেরেন তিনি। প্রথম ম্যাচে আউট হয়ে যান দুই বলে শূন্য রানে। পরের ম্যাচে অপরাজিত থাকেন ১৮ বলে ১১ রান করে। অবশেষে মেলে ধরতে পারলেন নিজের সেরাটা।
গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আরেকবার টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই জোড়া ধাক্কা খায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এক ম্যাচ পর একাদশে ফিরে পরপর দুই বলে কুইন্টন ডি কক ও লুয়ান-ড্রে প্রিটোরিয়াসকে বিদায় করেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। দুজনের কেউ পাননি রানের দেখা। সিরিজে প্রিটোরিয়াসের প্রথম ম্যাচ এটি।
মোহাম্মদ নাওয়াজের এক ওভারে দুই ছক্কায় পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা করেন ডেওয়াল্ড ব্রেভিস। তবে টিকতে পারেননি তিনি। পরের ওভারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের দ্বিতীয় বলে ব্রেভিসকে থামিয়ে দেন অভিষিক্ত অফ স্পিনার উসমান তারিক। পরের ওভারে নাওয়াজের শিকার ম্যাথু ব্রিটস্কি।
তিন ছক্কা ও একটি চারে শুরুটা দারুণ করেন অধিনায়ক ডনোভান ফেরেরাই। তিনিও পারেননি ইনিংস টেনে নিতে। পরপর দুই বলে ফেরেরাই (১৪ বলে ২৯) ও জর্জ লিন্ডাকে ফিরিয়ে দেন সালমান মির্জা।
দ্বাদশ ওভারে ৭৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে আবারও অল্পে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় তখন প্রোটিয়ারা। এক প্রান্ত আগলে রাখা ওপেনার রিজা হেনড্রিকস (৩৬ বলে ৩৪) দলকে নিয়ে যান একশর কাছে।
পরে আন্দিলে সিমেলানে (১০ বলে ১৩) ও বশের ক্যামিওতে লড়ার মতো পুঁজি গড়তে পারে সফরকারীরা।
চার ওভারে ২৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের সফলতম বোলার আফ্রিদি। ফাহিম আশরাফ ও উসমানের শিকার দুটি করে। সালমান মির্জা চার ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে নেন একটি উইকেট।
আগের ম্যাচে বিস্ফোরক ফিফটি করা সাইম আইয়ুব এবার রান তাড়ায় বিদায় নেন শূন্য রানে। আরেক ওপেনার সাহিবজাদা ফারহান ১৮ বলে করেন ১৯ রান।
তৃতীয় উইকেটে বাবর ও সালমান আলির ৫২ বলে ৭৬ রানের জুটিতে জয়ের পথে এগিয়ে যায় পাকিস্তান।
বাবর ফিফটি করেন ৩৬ বলে। সালমান ২৬ বলে ৩৩ রান করে ফিরলে ভাঙে জুটি। পরের ওভারে ক্যাচ দিয়ে থামে বাবরের ইনিংস।
জয় থেকে ৭ রান দূরে থাকতে বিদায় নেন হাসান নাওয়াজ, দুই বল পর আউট হন মোহাম্মদ নাওয়াজ। তবে জিততে সমস্যা হয়নি স্বাগতিকদের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৩৯/৯ (ডি কক ০, হেনড্রিকস ৩৪, প্রিটোরিয়াস ০, ব্রেভিস ২১, ব্রিটস্কি ১, ফেরেইরা ২৯, লিন্ডা ০, বশ ৩০*, সিমেলানে ১৩, উইলিয়ামস ৫, বার্টমান ০*; আফ্রিদি ৪-০-২৬-৩, সালমান মির্জা ৪-০-১৬-১, ফাহিম ৪-০-২৮-২, মোহাম্মদ নাওয়াজ ৩-০-৩৮-১, উসমান তারিক ৪-০-২৬-২, সাইম ১-০-৫-০)
পাকিস্তান: ১৯ ওভারে ১৪০/৬ (সাহিবজাদা ১৯, সাইম ০, বাবর ৬৮, সালমান আলি ৩৩, উসমান খান ৬*, হাসান নাওয়াজ ৫, মোহাম্মদ নাওয়াজ ০, ফাহিম ৪*; ফেরেইরা ৪-০-৩০-১, বশ ৪-০-২৪-২, লিন্ডা ৪-০-২০-০, উইলিয়ামস ৩-০-২৬-২, সিমেলানে ৩-০-২৩-১, বার্টমান ১-০-১৭-০)
ফল: পাকিস্তান ৪ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজ পাকিস্তান ২-১ ব্যবধানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: বাবর আজম
ম্যান অব দা সিরিজ: ফাহিম আশরাফ
আপনার মতামত লিখুন :