
আইসিসির সভায় নানা কিছু নিয়েই আলোচনা হয়। মতবিরোধ হয়, টানাপোড়েন তৈরি হয়। তবে এবারের সভায় যা হতে পারে, তা অভূতপূর্ব। এশিয়া কাপের ট্রফি নিয়ে আইসিসি সভা উত্তপ্ত হয়েছে আর কবে!
দুবাইয়ে আইসিসি সভা আগামী মঙ্গলবার। বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) সচিব দেবাজিৎ সাইকিয়ার আশা, এর আগেই মুম্বাইয়ের বোর্ড সদর দপ্তরে পৌঁছে যাবে ট্রফি। ভারতের জনগনকেও তিনি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, ট্রফি ভারতে ফিরবেই।
পাকিস্তানকে হারিয়ে ভারত এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছে সেই ২৮ সেপ্টেম্বর। কিন্তু ট্রফি এখনও ছুঁয়ে দেখতে পারেনি তারা। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) ও এশিয়া ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) সভাপতি মহসিন নাকভি, যিনি পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও, তার কাছ থেকে ট্রফি না নিতে অনড় ভারতীয় বোর্ড। নাকভিও নিজের অবস্থান থেকে সরেননি এক চুলও।
এক মাসের বেশি সময় ধরে চলছে টানাপোড়েন। ভারতীয় বোর্ড তাই বেশ ক্ষুব্ধ। এশিয়া কাপের ফাইনালের পর ট্রফি না পেয়ে সাইকিয়া বলেছিলেন, পরবর্তী আইসিসি সভায় ব্যাপারটি তুলবেন তারা। সেই সভার সময় ঘনিয়ে এসেছে। বার্তা সংস্থা পিটিআইকে তিনি বললেন, সভার আগেই ট্রফি পাওয়ার আশা করছেন তারা।
“হ্যাঁ, আমরা কিছুটা অসন্তুষ্ট যে, এক মাসের বেশি পেরিয়ে গেলেও ট্রফি আমাদেরকে দেওয়া হয়নি। ব্যাপারটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। দিন দশেক আগে আমরা এসিসি সভাপতির কাছে চিঠিও লিখেছিলাম, কিন্তু তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন নেই।”
“তারা এখনও ট্রফি তাদের কবজায় রেখেছে। তবে আমরা আশা করছি, দুই-এক দিনের মধ্যেই মুম্বাইয়ে বিসিসিআই অফিসে আমাদের কাছে ট্রফি পৌঁছে যাবে।”
এই সময়ের মধ্যে ট্রফি না পেলে নিজেদের করণীয় ঠিক করে রেখেছে ভারতীয় বোর্ড। সাইকিয়া জানিয়ে দিলেন, আটঘাট বেঁধেই আইসিসি সভায় যাবেন তারা।
“বিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত, ব্যাপারটি কীভাবে সামলাতে হয় এবং ভারতীয় জনগণকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, ট্রফি এখন ভারতে ফিরবেই। কেবল সময়টা এখনও চূড়ান্ত নয়। তবে একদিন না একদিন ট্রফি আসবেই।”
“পাকিস্তানের বিপক্ষে সব ম্যাচেই জিতেছি আমরা এবং ট্রফিও জিতেছি। চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছি। সবকিছুই রেকর্ডে আছে। কেবল ট্রফি নেই। আশা করি, শুভবুদ্ধির উদয় হবে।”
ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক বৈরিতার প্রভাব ক্রিকেটে নানাভাবেই পড়েছে যুগে যুগে। তবে এবারের এশিয়া কাপে তা ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সবকিছুকে। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে টসের সময় পাকিস্তানের অধিনায়ক সালমান আলি আঘার সঙ্গে হাত মেলাননি ভারতীয় অধিনায়ক সুরিয়াকুমার ইয়াদাদাভ। ম্যাচের পরে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলাননি ভারতীয় ক্রিকেটাররা। প্রতিবাদে পুরস্কার বিতরণী আয়োজন ও সংবাদ সম্মেলন বর্জন করে পাকিস্তান। তোলপাড় ওঠে ক্রিকেট বিশ্বে। পরে সুপার ফোর পর্বের ম্যাচ ও ফাইনালেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখা যায়। বিতর্ক ও কথার লড়াই চলতে থাকে।
আসরের তিন ধাপে দুই দলের তিন ম্যাচেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারায় ভারত।
ফাইনালের পর এই নাটক নেয় নতুন মোড়। এসিসির প্রধান ও পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভির কাছ থেকে ট্রফি নিতে অস্বীকৃতি জানায় চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় দল। তাদের চাওয়া ছিল অন্য কারও কাছ থেকে ট্রফি নেওয়া। কিন্তু নাকভি তাতে ছিলেন নারাজ। ভারতীয় দলকে ট্রফি না দিয়ে মঞ্চ থেকে তা সরিয়ে ফেলা হয়। কল্পিত ট্রফি নিয়ে ছবির জন্য পোজ দিয়ে উদযাপন করে ভারত।
ট্রফি নিয়ে এর পর থেকে দুই পক্ষের নানা চাপানউতোর চলছে। যা এখন আইসিসি সভায় গড়ানোর অপেক্ষা। আইসিসির সভাপতি এখন জয় শাহ, যিনি ভারতীয় বোর্ডেরই সাবেক সচিব, এসিসির সাবেক সভাপতি ও ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের প্রভাবশালী নেতা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমিত শাহর ছেলে।
আপনার মতামত লিখুন :