
তানজিদ হাসানের একার রান ৬২ বলে ৮৯। বাকি সবাই মিলে রান ৫৮ বলে ৫৭। বোলিংয়ে ধারহীন প্রায় সবাই। ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ ছুটে গেল একের পর এক । সবকিছুর ফলাফল, আরেকটি পরাজয়। আগেই সিরিজ জিতে নেওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক শেই হোপকে বিশ্রাম দিয়েও শেষ ম্যাচ জিতে হোয়াইটওয়াশ করে ছাড়ল বাংলাদেশকে।
তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষটিতে বাংলাদেশকে ৫ উইকেট হারাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
দেশের বাইরে প্রথমবার ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল ক্যারিবিয়ানরা। বাংলাদেশকেও হোয়াইটওয়াশ করল তারা প্রথমবার।
দেশের মাঠে দ্বিতীয়বার ৩-০ ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ। আগেরবার হেরেছিল তারা ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে।
চট্টগ্রামে শুক্রবার টস জিতে ব্যাটিং নামা বাংলাদেশ ২০ ওভারে তোলে ১৫১ রান।
শেষ ওভারের প্রথম বলে আউট হওয়া তানজিদের ৮৯ রান ছাড়া অন্য কেউ সেভাবে দাঁড়াতে পারেননি। দু অঙ্ক ছুঁতে পারেন কেবল আর সাইফ হাসান। এই বছর বেশ কিছু রেকর্ড গড়া তানজিদ নিজের অর্জনের ঝুলি আরও সমৃদ্ধ করেন এই ইনিংসে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের তিন স্পিনার আকিল হোসেন, রোস্টন চেইস ও খ্যারি পিয়ের দারুণ বোলিং করে আটকে রাখেন বাংলাদেশকে। তবে শেষ দিকে হ্যাটট্রিক করে সফলতম বোলার হয়ে যান রোমারিও শেফার্ড। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে এই সংস্করণে হ্যাটট্রিক ছিল আগে আর কেবল জেসন হোল্ডারের।
রান তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতে যায় ১৯ বল বাকি রেখেই। ২৯ বলে ৫০ রানের ইনিংস উপহার দেন এই ম্যাচের অধিনায়ক চেইস। পাঁচটি চোখধাঁধানো ছক্কায় ২৫ বলে ৫০ করেন চতুর্থ ম্যাচ খেলতে নামা তরুণ ব্যাটসম্যান আকিম ওগিস।
এই ওগিস আউট হতে পারতেন ২৭ রানে। রিশাদ হোসেনের বলে তার ক্যাচ ছাড়েন বদলি ফিল্ডার তানজিম হাসান।
ক্যাচ ছাড়া পালা শুরু হয় অবশ্য ইনিংসের শুরুর দিকেই। দ্বিতীয় ওভারেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান আমির জাঙ্গু। একটু পর আবার শরিফুল ইসলামের বলেই তার ক্যাচ ছাড়েন তাওহিদ হৃদয়। সিরিজে প্রথম খেলতে নামা এই ব্যাটসম্যান এরপরই গতিময় করেন ইনিংস।
আরেক ওপেনার আলিক আথানেজকে (৯ বলে ১) দ্রুতই ফেরান শেখ মেহেদি হাসান। ৩ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ছিল ১ উইকেটে ৬। এরপর জাঙ্গুর ব্যাটে গতি পায় ইনিংস। তাসকিন আহমেদের এক ওভারে তিন চার ও এক ছক্কায় ১৮ রান নেন তিনি।
পাওয়ার প্লের ভেতর ব্র্যান্ডন কিংয়ের উইকেট তুলে নেন নাসুম আহমেদ। পাওয়ার প্লে শেষে রিশাদ প্রথম ওভারেই ফেরান জাঙ্গুকে (২২ বলে ৩৪)। বাংলাদেশ তখন লড়াইয়ে ছিল ভালোভাবেই।
কিন্তু চেইস আর ওগিসের জুটিই বের করে নেয় ম্যাচ। ক্রিজে যাওয়ার পরপরই তাসকিনকে দারুণ এক ফ্লিক শটে ছক্কা মারেন ওগিস। রিশাদের এক ওভারে তার তিনটি ছক্কা ছিল দেখার মতো। ওই ওভারেই প্রথম ছক্কার পর তিনি জীবন পান ক্যাচ দিয়েও। পরের দুই বলে মারেন টানা ছক্কা। এরপর ছক্কায় উড়িয়ে দেন তিনি নাসুমকেও। হাওয়ায় মিলিয়ে যায় বাংলাদেশের আশাও।
এবারের সিপিএলে নজর কেড়ে জাতীয় দলে আসা ২২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি করেন ২৪ বলে। আরেকপ্রান্তে দারুণ খেলে চেইস পঞ্চাশে পা রাখেন ২৮ বলে।
দুজনের জুটিতে ৯১ রান আসে ৪৬ বলে।
জয়ের কাছে গিয়ে এক ওভারে বিদায় নেন দুজনই। রিশাদের দুর্দান্ত গুগলিতে বোল্ড হন চেইস। এক বল পর আরেকটি গুগলিতে বিদায় নেন ওগিস।
বাকি আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে বেগ পেতে হয়নি অন্যদের।
ম্যাচের প্রথম ভাগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ছিল নাটকীয়। প্রথম ওভারে তানজিদের জোড়া বাউন্ডারিতে শুরু হয় ম্যাচ। তবে এর আগেই তিনি শূন্য রানে রক্ষা পান বোলার জেসন হোল্ডারকে ক্যাচ দিয়েও।
ক্যাচটি ছিল অবশ্য অনেক কঠিন। তবে ১২ রানে যে ক্যাচটি তিনি দেন, তা ছিল একদমই সহজ। এবারও ফেলে দেন হোল্ডার।
একাদশে ফেরার ম্যাচে পারভেজ হোসেন ইমন আউট হন ১০ বলে ৯ রান করে। দলকে ভালো কিছু দিতে পারেননি অধিনায়ক লিটনও (৯ বলে ৬)।
পঞ্চাশ ছুঁতেই নবম ওভার লেগে যায় বাংলাদেশের। এরপর তানজিদের দারুণ কয়েকটি চার-ছক্কায় দ্রুত বাড়ে দলের রান। সাইফ হাসানের সঙ্গে জুটিও গড়ে ওঠে তার।
সাইফ লম্বা সময় ক্রিজে থেকেও সিঙ্গল নিতে ধুঁকছিলেন। দুটি ছক্কা মারলেও ২৩ রান করতে তিনি বল খেলেন ২২টি। জুটি থামে ৬৩ রানে।
পরের আর কোনো ব্যাটসম্যান দুঅঙ্ক ছুঁতে পারেননি। মূলত তানজিদই এগিয়ে নেন দলকে।
সেঞ্চুরির হাতছানি ছিল তার সামনে। তবে শেষ ওভারের প্রথম বলেই শেষ হয় তার ইনিংস।
এই ইনিংসের পথে বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম হাজার রানের রেকর্ড গড়েন তানজিদ (৪২ ইনিংসে)। এক পঞ্জিকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি বাউন্ডারির (৫৮) রেকর্ডটিও নিজের করে নেন এ দিন। এত বছরে সবচেয়ে বেশি ছক্কা (৩৮টি) ও সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড (৭১১) আরও পোক্ত করেন এ দিন।
দলের ৫৮.৯৪ শতাংশ রান করেন তিনি একাই, যা বাংলাদেশের হয়ে সম্পূর্ণ ইনিংসে শতকরা হারে সর্বোচ্চ।
তানজিদকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের পথে এগিয়ে যান শেফার্ড। আগের ওভারের শেষ বলে তার শিকার ছিল নুরুল হাসান সোহান। পরে শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে বিদায় করেন তিনি তানজিদকে, পরের বলে বোল্ড করে দেন শরিফুল ইসলামকে।
ওই ওভারে তাসকিনের ছক্কায় দেড়শর নাগাল পায় বাংলাদেশ। কিন্তু সেই রানে লড়াই জমাতেও পারেনি তারা।
বাংলাদেশ সামনেই খেলবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ও তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। ক্যারিবিয়ানরা যাবে নিউ জিল্যান্ড সফরে। বাংলাদেশের চেয়ে পুরো ভিন্ন আবহাওয়া ও কন্ডিশনে সেখানে তাদের পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু আগামী বুধবারই। এরপর আছে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫১ (তানজিদ ৮৯, পারভেজ ৯, লিটন ৬, সাইফ ২৩, রিশাদ ৩, সোহান ১, নাসুম ১, জাকের ৫, শেখ মেহেদি ০*, শরিফুল ০, তাসকিন ৯; হোল্ডার ৪-০-৩২-২, আকিল ৪-০-২৬-১, শেফার্ড ৪-০-৩৬-৩, চেইস ৪-০-২৩-১, পিয়ের ৩-০-২৩-২, মোটি ১-০-১১-০)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৬.৫ ওভারে ১৫২/৫ (আথানেজ ১, জাঙ্গু ৩৪, কিং ৮, চেইস ৫০, ওগিস ৫০, পাওয়েল ৫*, মোটি ৩*; শেখ মেহেদি ৪-০-১৮-১, শরিফুল ২-০-১২-০, তাসকিন ৩.৫-০-৫০-০, নাসুম ৩-০-২৯-১, রিশাদ ৪-০-৪৩-৩)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩-০ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: রোস্টন চেইস।
ম্যান অব দা সিরিজ: রোমারিও শেফার্ড।
আপনার মতামত লিখুন :