
শিরোপা জয়ে ফেভারিট হয়েও ফাইনালের আগে বিদায় নেওয়াটা হতাশার। আরও বেশি হতাশার, সেই পরাজয়ে নিজের দায় থাকা। সেই যন্ত্রণাকে সঙ্গী করেই বিশ্বকাপকে বিদায় বলছেন অ্যালিসা হিলি। অস্ট্রেলিয়া অবশ্যই পরের বিশ্বকাপে ফিরবে আবার ট্রফি জয়ের আশা নিয়ে। তবে দুটি ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী তারকা জানিয়ে দিলেন, তিনি আর ফিরবেন না বিশ্ব আসরে।
ভারতের কাছে সেমি-ফাইনালে ৫ উইকেটে হেরে শেষ হয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ শিরোপা ধরে রাখার আশা। আগের ১২ আসরে রেকর্ড ৭ বার ট্রফি জিতেছে যে দেশ, এই আসরেও শক্তি-সামর্থ্যের গভীরতায় যারা অনেক এগিয়ে, তাদের অভিযান শেষ ট্রফির মঞ্চে পা রাখার আগেই।
২০১৩ বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলে ছিলেন হিলি। গত বিশ্বকাপ জয়ে তিনিই নেতৃত্ব দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়াকে। বয়স পেরিয়ে গেছে তার ৩৫। আগামী বিশ্বকাপ আসতে আসতে পেরিয়ে যাবে ৩৯। এখনও তিনি দুর্দান্ত ফর্মে আছেন। এখনও তিনি দুনিয়ার সেরা ও সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যাটারদের একজন। কিন্তু চার বছর পরের বিশ্বকাপে তিনি নিজেকে দেখছেন না।
আগামী বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে ইংল্যান্ডে। ৬টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী হিলি সেখানে হয়তো খেলবেন। তবে ওয়ানডে বিশ্বকাপের অধ্যায় তার এখানেই শেষ।
এই বিশ্বকাপের পর ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নেবেন কি না, তা নিশ্চিত করেননি হিলি। তবে পরের বিশ্বকাপে খেলবেন না নিশ্চিতভাবেই। পেশাদারিত্বে মোড়ানো থাকে তাদের ক্রিকেট, ওয়ানডে ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার সামনের পথচলা নিয়ে তার রোমাঞ্চ তুমুল।
“আমি সেখানে (পরের বিশ্বকাপ) থাকব না। বলেই দিচ্ছি। পরের চক্রে তাকানো সৌন্দর্যই এমন, আমরা দেখব কী অপেক্ষায়। আগামী বছরের মাঝামাঝি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আছে, আমাদের দলের জন্য যা রোমাঞ্চকর। তবে আমার মনে হয়, আমাদের ওয়ানডে ক্রিকেটে কিছুটা পালাবদল দেখা যাবে আবার।”
“আজকে রাতের ভুল থেকে আমরা শিখব। আমরা গড়ে উঠব, আরও ভালো হয়ে উঠব। দলের তরুণদের জন্য আরও ভালো সুযোগ পাওয়ার যে হাতছানি, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের জন্য সেটি রোমাঞ্চকর।”
ভুলের তালিকা এ দিন বেশ লম্বা অস্ট্রেলিয়ার। ফিবি লিচফিল্ডের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পথ ধরে যেভাবে এগোচ্ছিল দল, এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল ৩৮০ রানের মতো স্কোর হতে পারে। পরে দ্রুত কিছু উইকেট হারিয়ে কমে যায় রানের গতি। তার পর অ্যাশলি গার্ডনার যখন ক্রিজে ছিলেন, তাদের দৃষ্টি ছিল ৩৫০-৩৬০ রানে। কিন্তু শেষ দিকে রান আউট হয়ে যান গার্ডনার। অস্ট্রেলিয়া অলআউট হয় ৩৩৮ রানে।
তার পরও লক্ষ্য ছিল বিশাল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার ক্ষুরধার বোলিং আক্রমণ এ দিন ছিল ধারহীন। গ্রাউন্ড ফিল্ডিং যদিও অসাধারণ ছিল তাদের। কিন্তু সর্বনাশ হয় ক্যাচিংয়ে। ভারতের সেঞ্চুরিয়ান জেমিমা রদ্রিগ্সের সহজ ক্যাচ ছাড়েন স্বয়ং হিলিই। পরে জেমিমার আরেকটি সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি তাহলিয়া ম্যাকগ্রা। ৮৯ রানের ইনিংস খেলে জেমিমার সঙ্গে ১৬৭ রানের রেকর্ড জুটি গড়া হারমানপ্রিত কৌরও জীবন পান।
নিজেদের ব্যর্থতায় এমন পরাজয় বলেই হিলিকে পোড়াচ্ছে বেশি। কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন তিনি নিজেকেও। তবে ভবিষ্যতে নিজে না থাকলেও দল যে ঘুরে দাঁড়াবে, তা নিয়ে সংশয় নেই তার।
“ফিরে তাকালে মনে হবে, দায় আমাদের নিজেদেরই। সম্ভবত প্রথমবার মনে হচ্ছে, আমরা এমনটি করেছি। ব্যাট হাতে ভালোভাবে শেষ করতে পারিনি, বোলিং ভালো করিনি এবং মাঠে অতগুলো সুযোগ হাতছাড়া করেছি। তার পরও অবশ্য শেষের আগের ওভার পর্যন্ত ম্যাচ টেনে নিয়েছি। সেখান থেকে (ইতিবাচক) কিছু নিতে পারি। তবে শেষ পর্যন্ত আমরা পারিনি।”
“যথেষ্ট সুযোগ আমরা তৈরি করেছিলাম, চাপ সৃষ্টি করেছিলাম। কিন্তু কাজে লাগাতে পারিনি। আমার নিজেরও দায় আছে… এই ব্যাপারগুলিতেই তো অস্ট্রেলিয়া গর্ব খুঁজে নেয়। এখানেই আজকে আমরা নিজেদের ডুবিয়েছি। এজন্যই এই হার বেশি হতাশার। এখান থেকে আমরা শিখব। আরও সমৃদ্ধ হব এবং আমাদের ওয়ানডে ক্রিকেট আশা করি আরও উন্নতি করবে।”
আপনার মতামত লিখুন :