
দুই বল খেলে শূন্য রানে কাভারে ধরা পড়লেন বাবর আজম। রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে তখন পিনপতন নীরবতা। ফেরার ম্যাচে সাবেক অধিনায়কের ব্যর্থতার দিনে পারল না পাকিস্তানও। রিজা হেনড্রিকসের ফিফটি, কর্বিন বশের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ও জর্জ লিন্ডার অলরাউন্ড নৈপুণ্যে জিতে সিরিজে এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ৫৫ রানে। ১৯৪ রানের পুঁজি গড়ে পাকিস্তানকে ১৩৯ রানে গুটিয়ে দিয়েছে সফরকারীরা।
এইডেন মার্করাম, ডেভিড মিলার, ট্রিস্টান স্টাবস, রায়ান রিকেলটন, কাগিসো রাবাদা, মার্কো ইয়ানসেনদের ছাড়া অনেকটা দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে এই দাপুটে জয় পেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
প্রথম দল হিসেবে এই মাঠে আগে ব্যাটিং করে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা। এখানে আগের আট ম্যাচের ছয়টিতে জিতেছিল পরে ব্যাটিং করা দল, অন্য দুটির ফল হয়নি।
ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে একপর্যায়ে ২২০ বা ২৩০ রানে চোখ রাখছিল প্রোটিয়ারা। পাওয়ার প্লেতে তাদের স্কোর ছিল ১ উইকেটে ৭৪, প্রথম ১০ ওভারে ৩ উইকেটে ১১১।
পরের ১০ ওভারে ঘুরে দাঁড়িয়ে লক্ষ্যটা দুইশর নিচে রাখতে পারে পাকিস্তান। কিন্তু ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ হয় তারা পুরোপুরি। শূন্য রানে জীবন পেয়ে সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেন সাইম আইয়ুব।
চার ওভারে মাত্র ১৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সফলতম বোলার বশ। এই পেস বোলিং অলরাউন্ডারের আগের সেরা বোলিং ছিল ২০ রানে ৩ উইকেট।
ব্যাট হাতে ২২ বলে ৩৬ রানের ক্যামিও ইনিংসের পর, তিন ওভারে ৩১ রান ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ-সেরার স্বীকৃতি পান বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার লিন্ডা।
হেনড্রিকস ৫ চার ও এক ছক্কায় ৪০ বলে করেন ৬০ রান।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে হেনড্রিকস ও কুইন্টন ডি ককের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। চতুর্থ ওভারে ডি কককে ফিরিয়ে ২৩ বলে ৪৪ রানের শুরুর জুটি ভাঙেন সাইম। ৫ চারে ১৩ বলে ২৩ রান করেন প্রোটিয়া কিপার-ব্যাটসম্যান।
দ্বিতীয় উইকেটে আরেকটি ত্রিশোর্ধ জুটিতে ছুটছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। টি-টোয়েন্টি অভিষেকে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন টনি ডি জর্জি।
সাত ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ছিল ১ উইকেটে ৮৯। অষ্টম ওভারে প্রথমবার বোলিংয়ে আসা মোহাম্মদ নাওয়াজকে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় ওয়াইড ডেলিভারিতে স্টাম্পড হয়ে ফেরেন ডি জর্জি। ৫ চার ও এক ছক্কায় ১৬ বলে ৩৩ রান করেন তিনি।
দ্রুত আরও দুই ব্যাটসম্যানকে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। একটি ছক্কা মেরেই বিদায় নেন ডেওয়াল্ড ব্রেভিস। ম্যাথু ব্রিটস্কি টিকতে পারেন চার বল। ভালো করতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ডনোভান ফেরেইরাও।
৩৩ বলে ফিফটি করেন হেনড্রিকস। ষষ্ঠ উইকেটে তার ও লিন্ডার ২১ বলে ৩৯ রানের জুটিতে এগিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
দুজনের কেউই শেষ পর্যন্ত যেতে পারেননি। শেষ দুই ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে কেবল ১১ রান তুলতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা।
চার ওভারে ২৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানের সফলতম বোলার মোহাম্মদ নাওয়াজ।
রান তাড়ায় নেমে নিজের আট ইনিংসের মধ্যে পঞ্চমবার শূন্য রানে আউট হতে পারতেন সাইম। কিন্তু প্রথম ওভারে তার ক্যাচ ফেলেন ব্রিটস্কি। দ্বিতীয় ওভারে লুঙ্গি এনগিডিকে তিনটি চার মারেন সাহিবজাদা ফারহান।
পঞ্চম ওভারে ফারহানকে (১৯ বলে ২৪) ফিরিয়ে ৩১ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন লিজাড উইলিয়ামস। পরের ওভারে বশের বলে কাভারে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাবর, টিকতে পারেন দুই বল।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির দ্বিতীয় সফলতম ব্যাটসম্যান বাবর পাকিস্তানের জার্সিতে আগের ম্যাচটি খেলেছিলেন গত ডিসেম্বরে। স্ট্রাইক রেটের দুর্বলতার কারণে বাদ পড়েছিলেন তিনি।
নিজের পরের ওভারে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলি আগাকেও বিদায় করেন বশ। শুরুতে জীবন পেয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সাইম। একাদশ ওভারে লিন্ডার বলে আলগা শট খেলে আউট হন তিনি (২৮ বলে ৩৭)।
এরপর নিয়মিত উইকেট হারায় পাকিস্তান। মোহাম্মদ নাওয়াজের ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ২০ বলে ৩৬ রানের ইনিংসে পরাজয়ের ব্যবধানই শুধু কমাতে পারে স্বাগতিকরা।
আগামী শুক্রবার সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ হবে লাহোরে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা: ২০ ওভারে ১৯৪/৯ (হেনড্রিকস ৬০, ডি কক ২৩, ডি জর্জি ৩৩, ব্রেভিস ৯, ব্রিটস্কি ১, ফেরেইরা ১০, লিন্ডা ৩৬, বশ ৭, উইলিয়ামস ৩, বার্গার ০*; আফ্রিদি ৪-০-৪৫-১, নাসিম ৩-০-৩৪-১, সাইম ৪-০-৩১-২, আবরার ৪-০-৪২-১, সালমান ১-০-১৫-০, মোহাম্মদ নাওয়াজ ৪-০-২৬-৩)
পাকিস্তান: ১৮.১ ওভারে ১৩৯ (সাহিবজাদা ২৪, সাইম ৩৭, বাবর ০, সালমান ২, উসমান ১২, হাসান নাওয়াজ ৩, মোহাম্মদ নাওয়াজ ৩৬, ফাহিম ১, আফ্রিদি ৪, নাসিম ৯, আবরার ০*; বার্গার ৪-০-৩৫-০, এনগিডি ৪-০-৩৫-১, উইলিয়ামস ৩.১-০-২১-২, বশ ৪-০-১৪-৪, লিন্ডা ৩-০-৩১-৩)
ফল: ৫৫ রানে জয়ী দক্ষিণ আফ্রিকা
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে প্রথমটির পর ১-০তে এগিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা
ম্যান অব দা ম্যাচ: জর্জ লিন্ডা
আপনার মতামত লিখুন :