
ভারত ও শ্রীলঙ্কায় উইমেন’স ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে বাংলাদেশ দল দেশে ফিরল এক জয় নিয়ে। পাকিস্তানকে হারিয়ে শুরুটা হয় দারুণ, কিন্তু ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে জয়ের সুযোগ হয় হাতছাড়া। দেশে ফিরে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির হিসাব মেলাতে গিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানা তাগিদ দিয়ে বললেন, পরের আসরের প্রস্তুতি শুরু করতে হবে এখনই।
বিমানবন্দরে ক্রিকেটারদের চোখে মুখে স্পষ্ট ছিল তিনটি বড় সুযোগ হাতছাড়ার আক্ষেপ। সেখানেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে প্রস্তুতি, নিজের পারফরম্যান্স ও ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে কথা বললেন নিগার।
দীর্ঘ সময়ের ম্যাচ ঘাটতি বিশ্বকাপ ব্যর্থতার মূল কারণ কিনা?
নিগার সুলতানা: দল হিসেবে আমরা যদি ধারাবাহিক হতে পারি, তাহলে বড় ম্যাচ আমাদের ধরতে পারা সম্ভব হবে। প্রথমত আমি মনে করি যে, দুইটা না অনেকগুলো ম্যাচেই আমাদের জয়ের সুযোগ ছিল। কিন্তু সেটা আমরা ছিনিয়ে নিতে পারিনি। দল হিসেবে বলব, এটা আমাদের ব্যর্থতা। সবার প্রত্যাশা ছিল দল যেভাবে শুরু করেছে টুর্নামেন্ট, বলব যে তিনটা ক্লোজ ম্যাচ আমাদের পক্ষেই ছিল, কিন্তু আমরা ধরতে পারিনি।
অবশ্যই প্রস্তুতির একটা বিষয় আছে। দ্বিতীয়ত যতটুকু প্রয়োজন ছিল ততটুকু আমরা পারিনি। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের ভালো প্রস্তুতিই ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক ম্যাচ, দীর্ঘ সময় ম্যাচ না খেলার একটা ঘাটতি তো ছিলই। বড় টুর্নামেন্টগুলোয় কঠিন সময়গুলোতে কীভাবে উতরাতে হয়, স্নায়ু ধরে রেখে পারফর্ম করতে হয়, দলকে ওই পরিস্থিতি থেকে বের করে আনতে হয়, এগুলো আপনি সেখানে শিখবেন। আমি এখনও বলব আমাদের অভিজ্ঞতার এখনও বেশ ঘাটতি আছে। সত্যি বলতে আমরা যারা সিনিয়র ক্রিকেটার ছিলাম, তাদের দায়িত্বটা বেশি ছিল। তরুণী ক্রিকেটারদের আমরা চাপ দিতে চাইনি। আমরা যারা একটু অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ক্রিকেটার ছিলাম তারা যদি ভালো করতে পারতাম, তখন হয়তো বা আমরা আরও দুয়েকটা ম্যাচ জিততে পারতাম।
ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট ছিলেন?
নিগার সুলতানা: ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার সেরাটা দিয়ে ব্যাটিং করতে পারিনি। আমার অফ ফর্মটা দলকে ভুগিয়েছে বেশি। কারণ দেখেন, যখন ভালো করি তখন একটা ভালো স্কোর থাকে। কারণ আমি অন্যরকমভাবে ব্যটিং করতে পছন্দ করি। তো আমি সেভাবে দলকে সহায়তা করতে পারিনি। যেটা বলব যে, একটা অভাব রয়ে গিয়েছিল।
ব্যাটিংয়ে একটা বিষয় থাকে না, ধারাবাহিক পারফরম্যান্স হয়েছে ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে। তবে ব্যাক্তিগতভাবে কয়েকজন নিয়মিত ব্যাটিংয়ে ভালো করেছে। শারমিন আক্তার সুপ্তা, সোবহানা মোস্তারি ভালো করেছে। দুই একটা ম্যাচে ছোট ছোট ব্যক্তিগত ক্যামিও ছিল, স্বর্ণা খুব ভালো খেলেছে। ঝিলিক শুরুটা ভালো করেছে। দল হিসাবে যদি আমরা ধারাবাহিক হতে পারি তখন বড় ম্যাচগুলো ধরা সম্ভব হবে।
মারুফা বিশ্বকাপে নতুন বলে ভালো শুরু করেও পরে নিজেকে মেলে ধরতে না পারায় দল কি ভুগেছে?
নিগার সুলতানা: মারুফা নতুন বলে আমি বলব ধারাবাহিক ছিল। মাঝে দুই একটা ম্যাচে খারাপ করেছে। কিন্তু ওর কাছ থেকে এখন দল অনেক বেশি আশা করে। পাওয়ার প্লেতে তিন চার ওভার করার পর মিডল ওভারে ওকে বোলিং করানোটা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। রিদম পাচ্ছিল না। লাইন লেংথ ভালো ছিল না। এমন পরিস্থিতি ছিল যে রানও আটকানো যাচ্ছিল না। ওকে বারবার এনে চেষ্টাও করা যাচ্ছিল না।
স্বর্ণা-ঝিলিকদের পারফরম্যান্স নিয়ে আক্ষেপ আছে?
নিগার সুলতানা: ঝিলিক যেভাবে শুরু করেছিল, ও সেভাবে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি। পাওয়ার প্লেতে আমরা হয় খুব মন্থর ব্যাটিং করেছি। না হয় অনেক বেশি উইকেট দিয়েছি। এইদিক থেকে আমাদের দলের বেশি ক্ষতি হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া বাকি ম্যাচগুলোতে ওর কাছে প্রত্যাশা ছিল। কারণ ওর সক্ষমতা আছে করে দেখানোর। কিন্তু সে করতে পারেনি। ও যদি দলের জন্য কিছু ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারত, তাহলে ১৫০ বা এমন রানগুলোকে আমরা আরও বড় করতে পারতাম।
পরের বিশ্বকাপের প্রস্তুতি কখন থেকে শুরু করা উচিত?
নিগার সুলতানা: আপনি যখন একটা বিশ্বকাপ খেলতে যাবেন, আপনি ৬ মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিলে হবে না। অন্য দলগুলো দুই বছর আগে থেকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নেয়। ওইভাবে আমাদের এগোতে হবে। যেহেতু এই দলটা সক্ষমতা রাখে ভালোভাবে ক্রিকেট খেলার। আমরা আরও পরিণত ক্রিকেট খেললে হয়তো আমরা আজকে ফেরত আসতাম না। সেমি-ফাইনালে খেলতে পারতাম। এই জিনিসগুলো উতরাতে হলে ক্রিকেটারদের আরও বেশি মানসিকভাবে উদ্দীপ্ত করা দরকার। পরের বিশ্বকাপের জন্য এখন থেকে আমাদের প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিৎ।
আপনার মতামত লিখুন :