
প্রথম ওভারে ১২ রান, দারুণ শুরু। কিন্তু পাওয়ার প্লেতেই ঘুরে গেল ম্যাচের চিত্র। চার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গেল বাংলাদেশ। মিডল অর্ডার পারল না দায়িত্ব নিতে। পরে লোয়ার অর্ডারের ব্যাটে কিছুটা লড়াই করল কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হেরে গেল লিটন দাসের দল।
চট্টগ্রামে দর্শকে পূর্ণ স্টেডিয়ামে ১৬ রানে হেরে সিরিজে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। ১৬৫ রান তাড়ায় দুই বল বাকি থাকতে তারা থেমেছে ১৪৯ রানে।
৫৭ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এই সময়ে কোনো ২০ রানের জুটিও গড়তে পারেনি তারা। স্বাগতিকদের প্রথম ৬ ব্যাটসম্যানের মিলিত রান কেবল ৬২।
শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। আকিল হোসেনের করা ইনিংসের প্রথম ওভারে টানা দুই বলে ছক্কা-চার মেরে ঝড়ো শুরুর আভাস দেন তানজিদ হাসান। পরের ওভারে জেডেন সিলসের অফ স্টাম্পে থাকা শর্ট পিচ বলে পুল করতে গিয়ে মিড অনে রোমারিও শেফার্ডের দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরেন তিনি।
চোট কাটিয়ে ফেরার ম্যাচে দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি লিটন। আকিলকে ফিরতি ক্যাচ দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ছক্কা মেরেই থেমে যান সাইফ হাসান।
ব্যাখ্যাতীত শটে শামীম হোসেন বোল্ড হয়ে বিপদ বাড়ান দলের। খ্যারি পিয়েরের অফ স্টাম্পের বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন নুরুল হাসান সোহান।
ধুঁকতে ধুঁকতে প্রথম ১০ ওভারে কেবল ৬৩ রান করতে পারে বাংলাদেশ। লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা দারুণ লড়াই করলেও শেষ ১০ ওভারে ১০৩ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেনি তারা।
ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একটু দায়িত্ব নিয়ে খেলা হৃদয় থেমে যান ২৫ বলে ২৮ করে।
এরপরই শুরু হয় বাংলাদেশের সত্যিকারের লড়াই। রোমারিও শেফার্ডের ওভারে ছক্কা ও দুই চারে ১৮ রান নিয়ে পাল্টা আক্রমণের পথ দেখান তানজিম হাসান। বাঁহাতি স্পিনার পিয়েরের শেষ ওভার থেকে একটি করে ছক্কা চারে ১৩ রান নেন নাসুম আহমেদ।
১৫ ওভারে স্কোর ছিল ৬ উইকেটে ১১১। তখন প্রয়োজন ৩০ বলে ৫০ রান।
পরপর দুই ওভারে তানজিম ও নাসুমের বিদায়ে আবারও দিক হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। জেসন হোল্ডারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে দিয়ে সীমানায় ধরা পড়েন তানজিম। ভাঙে ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা ২৩ বলে ৪০ রানের জুটি।
২৭ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ৩৩ রান করেন তানজিম। পরে ওভারে সীমানায় চমৎকার রিলে ক্যাচে থামেন নাসুম। শেষ জুটিতে ২০ রান যোগ করে ব্যবধান কমান তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান।
শেষ ওভারে শেফার্ডের বল গ্যালারিতে ফেলেছিলেন তাসকিন। কিন্তু ক্রিজের অনেক গভীরে গিয়ে ব্যাট করা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হিট উইকেট হলে সেই রান আর পাননি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফলতম বোলার দুই পেসার জেসন হোল্ডার ও জেডেন সিলস। দুইজনেই নিয়েছেন ৩টি করে উইকেট।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে সতর্ক শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার আলিক আথানেজ ও ব্র্যান্ডন কিং।
পাওয়ার প্লেতে ৩৫ রান তোলার পর রানের গতি বাড়ান তারা। ৫৯ রানের জুটি ভাঙে রিশাদ হোসেনের রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে আথানেজ বোল্ড হলে। বাঁহাতি এই ওপেনার ২৭ বলে করেন ৩৪ রান।
ক্রিজে গিয়েই শট খেলতে শুরু করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক হোপ। বাড়তে থাকে রানের গতি। আক্রমণে ফিরে পরপর দুই বলে কিং (৩৩) ও শেরফেন রাদারফোর্ডকে বিদায় করেন তাসকিন।
নিজের শততম টি-টোয়েন্টিতে শুরুতে খুব ভুগছিলেন রভম্যান পাওয়েল। ৭ রানে শর্ট থার্ড ম্যানে ক্যাচও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেটা নিতে পারেননি তানজিম। পরে এরই চড়া মাশুল দিতে হয় দলকে।
শেষ ৩ ওভারে ৫১ রান যোগ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এতে বড় ভূমিকা পাওয়েলের। মুস্তাফিজকে ছক্কায় ওড়ানোর পর তানজিমের ওভারে মারেন টানা তিন ছক্কা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ও বর্তমান অধিনায়ক খেলেন ২৮ বল করে- হোপ করেন ৪৪ রান, তাকে ছাড়িয়ে পাওয়েল করেন ৪৬।
তাদের শেষের এই ঝড়ই শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিল ম্যাচে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৬৫/৩ (আথানেজ ৩৪, কিং ৩৩, হোপ ৪৬*, রাদারফোর্ড ০, পাওয়েল ৪৪*; নাসুম ৪-০-১৫-০, তাসকিন ৪-০-৩৬-২, তানজিম ৪-০-৪৭-০, মুস্তাফিজ ৪-০-২৪-০, রিশাদ ৪-০-৪০-১)
বাংলাদেশ: ১৯.৪ ওভারে ১৪৯ (সাইফ ৮, তানজিদ ১৫, লিটন ৫, হৃদয় ২৮, শামীম ১, সোহান ৫, তানজিম ৩৩, নাসুম ২০, রিশাদ ৬, তাসকিন ১০, মুস্তাফিজ ১১*; আকিল ৪-০-২২-২, সিলস ৪-০-৩২-৩, পিয়ের ৪-০-৩৩-১, হোল্ডার ৪-০-৩১-৩, শেফার্ড ৩.৪-০-২৯-১)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: রভম্যান পাওয়েল
আপনার মতামত লিখুন :