ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণে দারুণ কিছু পেসার আছেন। তবে তাদের কেউ তো আর জাসপ্রিত বুমরাহ নন! স্যাম কনস্টাসকে নিয়ে তাই সংশয়ের কারণ দেখছেন না ডেভিড ওয়ার্নার। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ব্যাটসম্যানের মতে, সামনে অ্যাশেজে ওপেনিংয়ে ভরসা রাখা উচিত কনস্টাসের ওপর, তিন নম্বরে তিনি চান অভিজ্ঞ মার্নাস লাবুশেনকেই।
অ্যাশেজের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং অর্ডারের দুটি জায়গা নিয়ে আলোচনাও তত জোরাল হচ্ছে। খুব ভালো ফর্মে না থাকলেও ওপেনিংয়ে উসমান খাওয়াজার থাকা নিশ্চিতই। কিন্তু তার সম্ভাব্য সঙ্গী ও পরের ব্যাটসম্যান নিয়ে চলছে নানা জল্পনা।
ওয়ার্নারের অবসরের পর থেকে থিতু কোনো উদ্বোধনী জুটি পায়নি অস্ট্রেলিয়া। যাদেরকে নানা সময়ে চেষ্টা করা হয়েছে, তাদের একজন স্যাম কনস্টাস। তবে শুরুটা ভালো করলেও পরে তিনি আর ধরে রাখতে পারেননি ফর্ম। দলে জায়গাও হারাতে হয়েছে সেজন্য।
দলে ফেরার আলোচনায় তিনি উঠে এসেছেন গত মাসে অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের সফরে ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে আনঅফিসিয়াল টেস্টে সেঞ্চুরি করে। চলতি মাসে শেফিল্ড শিল্ডে মৌসুমের প্রথম ম্যাচে অবশ্য দুই ইনিংসেই ব্যর্থ হয়েছেন নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে।
তবে সিডনিতে সোমবার একটি অনুষ্ঠানে ওয়ার্নার বললেন, কনস্টাসের ওপরই ভরসা রাখা উচিত অ্যাশেজে।
“আমি চাইব, তারা (নির্বাচক কমিটি) যেন স্যামকে (কনস্টাস) ধরে রাখে এবং তাকে সুযোগ দেয়। অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের হয়ে সেঞ্চুরি করেছে সে। সেখানে দারুণ খেলেছে।”
“স্যাম কনস্টাস আসলে যা করতে পারে বলে আমরা জানি, আমার মনে হয় না তা এখনও আমরা পুরোপুরি দেখেছি। গত বছর… সে সম্ভবত উপলক্ষের বিশালত্বে চাপা পড়েছিল এবং তার সামান্য কিছু ঝলক কেবল আমরা দেখেছি। কিন্তু আমি তাকে নানা সময়ে দেখেছি ইনিংস গড়ে তুলতে, দেখেছি দারুণ কিছু ইনিংস খেলতে এবং সেসব কিছুই তাকে করতে দেখতে চাই আমি।”
ঘরোয়া ক্রিকেটে এমনিতে ধীরস্থির ব্যাটসম্যান হিসেবেই পরিচিতি ছিল কনস্টাসের। তবে টেস্ট অভিষেকে তাকে দেখা যায় ভিন্ন রূপে। গত ডিসেম্বরে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির বক্সিং ডে টেস্টে তিনি চমকে দেন গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে। ম্যাচের শুরু থেকেই স্কুপ, রিভার্স স্কুপের মতো শট খেলতে থাকেন।
টেস্ট ক্রিকেটে তার প্রথম বাউন্ডারি আসে জাসপ্রিত বুমরাহকে স্কুপ করে, পরের বলে ছক্কা মানের রিভার্স স্কুপে। শেষ পর্যন্ত ৬৫ বলে ৬০ রানের রোমাঞ্চকর ইনিংস উপহার দেন তিনি অভিষেকে। তবে পরের ৯ ইনিংসের কোনোটিতে আর ২৫ রানও ছাড়াতে পারেননি।
বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে বুমরাহর সামনে অস্ট্রেলিয়ান টপ অর্ডারের নড়বড়ে অবস্থার কারণে কনস্টাসকে দলে নেওয়া হয়েছিল বিশেষ ওই ভূমিকা দিয়ে। ওয়ার্নারের মতে, বুমরাহকে সামলানোর চেষ্টা অন্য বোলারদেরও একইভাবে খেলে বিপদ ডেকে এনেছেন কনস্টাস। ইংল্যান্ড দলে যেহেতু বুমরাহ নেই, অত ভাবনার কিছু তিনি দেখছেন না।
“ওদের (ইংল্যান্ড) তো জাসপ্রিত বুমরাহ নেই, কাজেই তার দুর্ভাবনার কোনো ব্যাপার নেই। দারুণ কিছু ফাস্ট বোলার ওদেরও আছে, তবে সে সেসব সামলাতে পারবে। গত বছর, আমার মনে হয়েছে উপলক্ষ তাকে পেয়ে বসেছিল। তার মাথায় এটা ঢুকে গিয়েছিল যে, বুমরাহকে খেলার একমাত্র পথ এটিই (আক্রমণ করা) এবং পরে অন্য বোলারদেরও সেভাবে খেলে ফেলেছে।”
“অন্য বোলারদের সামনে নিজের খেলা বদলানোর প্রয়োজন ছিল না তার। সে স্রেফ উইকেটে টিকে থেকে নিজের স্বাভাবিক ব্যাটিং করতে পারত। সে যদি এই কাজটা করতে পারে এবং বিভিন্ন ধাপের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে, আমার মনে হয়, অনেক দূর যাবে সে।”
কনস্টাসের মতো দলে জায়গা হারিয়েছেন লাবুশেনও। বাজে ফর্মের কারণে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের পর আর সুযোগ পাননি ৫৮ টেস্ট খেলা ব্যাটসম্যান।
তবে শেফিল্ড শিল্ডে মৌসুমের প্রথম ম্যাচে ১৬০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। ওয়ানডে কাপে দুটি সেঞ্চুরি করেছেন তিন ম্যাচের মধ্যে। ঘরোয়া ক্রিকেটের ফর্ম আবার তাকে জাতীয় দলের বিবেচনায় এনেছে। তাকে এমনকি ওপেন করানো হতে পারে, এমন আলোচনাও আছে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে।
তবে তাকে তিন নম্বরেই দেখতে চান ওয়ার্নার।
“কেউ যখন অনেক টেস্ট ম্যাচ খেলে ফেলে, তখন নিশ্চয়ই আমরা জানি তার সামর্থ্য কতটা এবং সে কী করতে পারে। টেস্ট ক্রিকেটে কারও ব্যাটিং গড় যদি ৫০ হয়, তাহলে তার ওপর আস্থা রাখতেই হয়।”
“সে ওপেন করবে? আমি তাকে ওপেনিংয়ে দেখতে চাই না। বরং তাকে তিন নম্বরে দেখতে চাই।”
লাবুশেন বাদ পড়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিন নম্বরে সুযোগ পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি ক্যামেরন গ্রিন। ছয় ইনিংসে কেবল একটি ফিফটি করেছেন তিনি।
আগামী ২১ নভেম্বর পার্থ টেস্ট দিয়ে শুরু এবারের অ্যাশেজ।
আপনার মতামত লিখুন :