বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচনে অনেক পরিচালকই নির্বাচিত হয়ে যাচ্ছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। মনোনয়নপত্র দাখিল করা ৫০ জনের মধ্যে ১৬ জন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন প্রার্থীতা। ক্লাব ক্যাটাগরির ৩০ জনের মধ্যে ১৩ জনই সরে দাঁড়িয়েছেন নির্বাচন থেকে। তাদের একজন, এক্সিউম ক্রিকেটার্সের এই কাউন্সিলর ইসরাফিল খসরু বললেন, সরকারের একটি গোষ্ঠীর প্রভাব বিস্তারের প্রতিবাদে তাদের এই সিদ্ধান্ত।
বিসিবি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্ধারিত সময় ছিল বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা। গত কিছুদিনের নানা গুঞ্জন ও নাটকীয়তার পথ ধরে শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র তুলে নেন তামিম ইকবালসহ ১৬ জন।
পাতানো নির্বাচনের অভিযোগ তুলে তামিম বলেন, “আগে নির্বাচনের ফিক্সিং বন্ধ করুন, পরে ক্রিকেটের ফিক্সিং বন্ধ করার চিন্তাটা করবেন।” এই নির্বাচন বিসিবির জন্য একটি কালো দাগ হয়ে থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন ইসরাফিল খসরু। তামিম যেমন কয়েকদিন আগে বলেছিলেন সরকারের একটি অংশের হস্তক্ষেপের কথা, সেটিরই প্রতিধ্বনি শোনা গেল তার কণ্ঠে।
“পুরা প্রসেসটাতে স্বচ্ছতা ছিল না। প্রথম দিন থেকেই পুরো প্রক্রিয়ায় কোনো স্বচ্ছতা ছিল না। এখানে বিভিন্নভাবে প্রভাব সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছে, নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। জেলা লেভেল, বিভাগ লেভেলে বলেন, এখন ক্লাব লেভেলে বলেন, ১৫টি ক্লাবকে একবার বাতিল করা হচ্ছে, আবার পরের মুহূর্তে এটাকে আবার বৈধ করা হচ্ছে।”
“কাজেই এখানে দেখা যাচ্ছে যে একটা নগ্ন হস্তক্ষেপ আছে এবং এখানে মূলত নির্বাচনের কোনো পরিবেশ আমি দেখছি না। আমি আপনাকে একদম সরাসরি বলি, পরিস্কার করে বলি, সরকারি একটি গোষ্ঠী। পুরো সরকার আমি বলব না, সরকারের ভেতরে একটা গোষ্ঠী এখানে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করেছে।”
খসরুর দাবি, সেই হস্তক্ষেপের প্রমাণ তারা জেলা ও বিভাগীয় ক্যাটাগরির পর্যায়ে পেয়েছেন।
“আমরা শুনেছি বিভিন্ন জায়গায় ডিসিদেরকে, যখন জেলা-বিভাগ লেভেলের কাউন্সিলর নির্বাচনের কথা আসছে, তখন ডিসিদেরকে প্রভাবিত করা হয়েছে। আমরা শুনেছি তাদেরকে কল করে, ফোন করে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিন্তু আমরা প্রভাব বিস্তারের নমুনা পেয়েছি।”
“এই যে ১৫টা ক্লাবের বিষয়, শুনানি হয়ে ১৫টা ক্লাবকে বৈধ ঘোষণা করা হলো, আবার কয়দিন আগে আমরা দেখলাম আবার তাদেরকে বাতিল করা হয়েছে। এভাবে তো… আমি এখানে একটা স্বেচ্ছাচারিতা দেখছি।”
বিএনপির রাজনীতিবিদ আমির খসরু মাহমুদের ছেলে বিসিবির কাউন্সিলরের মতে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এই পরিস্থিতি অপমানজনক।
“খুবই দুঃখজনক যে, বিসিবির মতো একটা জায়গায় এরকম একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। খুবই দুঃখজনক। আমরা যেটা আজকে পজিশন নিয়েছি, এটা হচ্ছে আমাদের নৈতিক অবস্থান যে, এভাবে বিসিবি নির্বাচন হতে পারে না। নতুন বাংলাদেশে আমি এরকম নির্বাচন দেখতে চাই না। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে আমরা মনে করি বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের…। এরকম একটা নির্বাচন তো হতে পারে না এবং ম্যানুফ্যাকচার্ড ইলেকশন হতে পারে না।”
খসরু জানান, শিগগিরই তারা সাংবাদিক সম্মেলন করে বিস্তারিত অবস্থান জানাবেন।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন আরেক ক্লাব সংগঠক রফিকুল ইসলাম বাবুও। তবে কিছুটা ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে ধরেছেন বিসিবির সাবেক এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ।
“এই নির্বাচনটা যদি পরবর্তীতে হয়তো এটা… মানে সময়, সময় দিতে পারে, বাড়াতে পারে, এটাও হইতে পারে কিন্তু … অ্যাডহক কমিটির পরিস্থিতি যদি হয়, তাহলে হতে পারে। অথবা আরেকটি, আরেকটি উত্তরণের পথ আছে, সেটা হলো এই কমিটিটাই, যেটা চলমান কমিটি আছে, সেটাকে বর্ধিত করে দেওয়া ছয় মাসের জন্য। এটা কিন্তু করতে পারে।”
তবে সরকারের পক্ষ বা ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে কোনো সমঝোতার গুঞ্জন নাকচ করেন ইন্দিরা রোড ক্রীড়া চক্রের এই কাউন্সিলর।
“কখনও এটা আমি বলি নাই এটা সমঝোতা হয়েছে। ক্রীড়া উপদেষ্টার সাথে অনেকেই বসেছে কীভাবে সুষ্ঠুভাবে, সুন্দরভাবে এই নির্বাচনটা করা যায়, সেটার জন্য।”
সব মিলিয়ে, বিসিবি নির্বাচন নিয়ে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছিল, তা এখন এক নতুন মোড়ে পৌঁছেছে। কাউন্সিলরদের মনোনয়ন ঘিরে হাইকোর্টের রায়, দুদকের তদন্তর সুপারিশ এবং ১৫ ক্লাব সংগঠকের কাউন্সিলরশিপ বাতিল চেয়ে কোর্টে রিটের জেড়ে প্রার্থীদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত—সবকিছু মিলিয়ে নির্বাচনী পরিস্থিতি আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।
আপনার মতামত লিখুন :