ঘিয়া রঙের পাঞ্জাবি গায়ে ডায়াসের দিকে যেতে যেতে তামিম ইকবাল বললেন, “ভেবেছিলাম এই পাঞ্জাবিটা নির্বাচনের দিন পরব…।” তার মুখে তখন হাসি, তবে মনে দানা বাঁধছে হতাশা ও ক্ষোভের মেঘ। সেই মেঘ বৃষ্টি হয়ে ঝরল একটু পরই।পাতানো নির্বাচনের ছক সাজানো হয়েছে অভিযোগ করে সাবেক অধিনায়ক বললেন, বিসিবির জন্য একটি কালো দাগ হয়ে থাকবে এই নির্বাচন।
ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের কাউন্সিলর হিসেবে বিসিবি পরিচালক পদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন তামিম। কিন্তু মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্ধারিত দিনে বুধবার তিনি সরে দাঁড়ান নির্বাচন থেকে।
নির্বাচনে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন অন্তত ১৫ জন।
তামিম পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তুলে ধরেন তার সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ।
“প্রত্যাহারের কারণটি খুবই পরিষ্কার। এখানে আমার কাছে মনে হয় না যে আমাকে খুব বিস্তারিত বা ব্যাখ্যা করে কোন কিছু বলার আছে। আমি শুরু থেকেই একটা কথা বলে আসছি, নির্বাচনটা কোন দিকে যাচ্ছে বা কীভাবে হচ্ছে, এ জিনিস নিয়ে আপনারা সবাই এখন পরিষ্কার। যখন যেমন মনে হচ্ছে, যখন যা মনে হচ্ছে, তখন তা করা হচ্ছে। এটা… এটা আসলে নির্বাচন না। ক্রিকেটের সাথে এই জিনিসটা কোনো দিক থেকেই মানায় না।”
“যখন ইসি তালিকা দেবে আজকে কারা কারা প্রত্যাহার করেছেন, তাদের নামগুলা আপনারা দেখলেই বুঝতে পারবেন যে সবাই তাদের জায়গা থেকে হেভিওয়েট, তাদের ভোটব্যাংকও খুব শক্তিশালী। এটা হলো আমাদের একটা প্রতিবাদের পথ যে, এই নোংরামির অংশ আমরা থাকতে পারব না। এখানে বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন সময় অনেক ধরনের কথা বলা হয়েছে, তবে দিন শেষে আমার কাছে মনে হয় যে, এই নোংরামির সাথে আমরা কোনো দিক থেকে কোনভাবেই অংশ নিতে পারব না।”
তামিমের দাবি, মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে আগ্রহী ছিলেন আরও অনেকে। কিন্তু তাদেরকে নির্বাচনে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে নানাভাবে।
“একটা জিনিস আমি সবসময় বলছি, ক্রিকেট, বাংলাদেশ ক্রিকেট এটা ডিজার্ভ করে না, বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকেরাও এটা ডিজার্ভ করে না। জানি না কতজন স্বীকার করবেন বা করবেন না, আরও অনেকেই আজকে নাম প্রত্যাহার করতেন। তাদেরকে বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন উপায়ে বোঝানো হয়েছে বা চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে, কোনোভাবে থামানো হয়েছে।”
“তার পরও ১৫ জন যদি আজকে (প্রত্যাহার) করে থাকেন, এটা একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যা। প্রায় ৫০ শতাংশ সরে দাঁড়িয়েছে।”
তামিমের মতে, পাতানো নির্বাচনের এই খেলায় ক্রিকেটের পরাজয় হয়েছে।
“আপনারা জিততেও পারেন, হারতেও পারেন, তবে আজকে ক্রিকেট শতভাগ হেরে গিয়েছে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই। আপনারা বড় গলায় যে বলেন বাংলাদেশে ফিক্সিং বন্ধ করা লাগবে। আগে নির্বাচনের ফিক্সিং বন্ধ করুন, পরে ক্রিকেটের ফিক্সিং বন্ধ করার চিন্তাটা করবেন।”
গত কিছুদিনে তামিম কয়েক দফায় অভিযোগ করেছেন, বিসিবির একটি অংশ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। এ দিন তিনি এটা নিয়ে আলাদা করে কিছু না বললেও পরবর্তীতে মুখ খুলবেন বলে জানিয়ে রাখলেন।
“আমার কাছে মনে হয় যে এটা স্পষ্টভাবে পরিস্কার সবার কাছে, কারা কারা কোন সময়ে, কারা কারা কোন ধরনের সম্পৃক্ততা এখানে রেখেছেন, কী ধরনের হস্তক্ষেপ হয়েছে, নিয়ম ইচ্ছামত, সুবিধামতো যে সময় দরকার ও বদলানো হয়েছে। কারা কারা জড়িত, একদম পরিস্কার। আমি এর চেয়ে বেশি আর কোনো কথা বলব না, তবে ভবিষ্যতে আমি এটা নিয়ে অবশ্যই কথা বলব।”
“এই নির্বাচন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের জন্য একটা কালো দাগ হয়ে গেল। নির্বাচনের অংশ যারা আছেন, আমি নিশ্চিত, তারাও বুঝতে পারেন যে কোনো দিক থেকেই এটা একটা নির্বাচন ছিল না। আমার তরফ থেকে আমার এর চেয়ে বেশি আর কোন বার্তা দেওয়ার নেই।”
আপনার মতামত লিখুন :