টাকা-পয়সার কথা উঠলেই কি মনে হয়- বর্তমান মুহূর্তে বাঁচা আর দায়িত্বশীল থাকা যেন একসাথে সম্ভব নয়?
হয়ত দুপুরে বাইরে খাওয়া বা দামী ‘ওট মিল্ক লাতে’ গ্রহণের পর অপরাধবোধ ভুগতে হয়।
তবে বাস্তবে এমন হতে হবে না। কারণ, এক নতুন ধরনের নমনীয় ব্যক্তিগত অর্থ ব্যবস্থাপনার কৌশল আছে, যার নাম ‘সচেতন ব্যয়’।
কী এই সচেতন ব্যয়?
‘আই উইল টিচ ইউ টু বি রিচ বই’-এর লেখক এবং ‘এপোনমাস ব্লাগ’-এর প্রধান নির্বাহী রামিত সেঠি সিএনএন ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “একটি বাজেট অতীতের খরচের দিকে তাকায়। তবে সচেতন ব্যয়ের পরিকল্পনা ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে সাহায্য করে।”
“সচেতন ব্যয় মানে হল- যে বিষয়গুলো ভালোবাসেন, সেখানে উদারভাবে খরচ করা। আর যেগুলো নিজের কাছে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়, সেখানে নির্মমভাবে খরচ কমিয়ে আনা। এটা কোনোভাবে বঞ্চনার ব্যাপার নয়, বরং অর্থ ব্যবহারে সচেতন ও উদ্দেশ্যমূলক হওয়া”- মন্তব্য করেন তিনি।
সেঠি আরও বলেন, “যদিও কিছু প্রাচীন অর্থ সঞ্চয়ের নিয়ম এখনও কার্যকর, যেমন- আয়ের পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ সঞ্চয় করা। আর তিন থেকে ছয় মাসের জরুরি তহবিল রাখা।
তবুও সচেতন ব্যয়ের মাধ্যমে একই সাথে বিনোদন, ভ্রমণ, সুন্দর পোশাক কেনা উপভোগ করা যায়। আবার বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ও চালিয়ে যাওয়া সম্ভব।
অচেতন ব্যয়ের ফাঁদ
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ক্রেইটন ইউনিভার্সিটি-এর ‘হেইডার কলেজ অব বিজনেস’-এর সহকারী অধ্যাপক ও আর্থিক মনোবিজ্ঞানী ব্রাডলি ক্লন্টজ বলেন, “সচেতন ব্যয় শব্দটি থেকেই বোঝা যায়, অনেকেরই ব্যয় আসলে অচেতনভাবে হয়। যেমন- অচেতনভাবে খাওয়া বা কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই খরচ করা, বিশেষত ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার সময়।”
অচেতন ব্যয় কমাতে হলে নিজের কাছে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন করা জরুরি।
আমার টাকা কোথায় যাচ্ছে?
আমি কোন জিনিসে খরচ করতে সবচেয়ে ভালোবাসি এবং কেন?
স্থায়ী খরচ— যেমন বিল ও বাড়িভাড়া মেটাতে কত দরকার?
আমি কত বিনিয়োগ ও সঞ্চয় করতে চাই, এবং কেন?
হঠাৎ খরচ বা ছোট আনন্দের জন্য (যেমন- বন্ধুর সাথে কফি, পার্কিং ফি) কত রাখতে চাই?
‘সমৃদ্ধ জীবন’ পরিকল্পনা
সেঠির মতে, “এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই তৈরি করে সমৃদ্ধ জীবন। যা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত জীবন ও আর্থিক লক্ষ্য অনুযায়ী তৈরি। অন্য কারও মতামতের ভিত্তিতে নয়।”
যখন বোঝা যাবে, কোন খরচ নিজের কাছে সবচেয়ে অর্থবহ তখন অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কাটছাঁট করা অনেক সহজ হয়।
নিজের অভ্যাস বদলানো
লেখক একটি ব্যক্তিগত উদাহরণ দেন। তিনি কর্মদিবসে অফিসের বিনামূল্যের কফি পান করতেন। তবে সপ্তাহান্তে প্রিয় কফি শপে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে মানসম্পন্ন কফি উপভোগ করতেন।
এভাবে তিনি খরচ সীমিত করেও প্রিয় অভ্যাসের আনন্দ বজায় রাখতেন।
সেঠি বলেন, “ছোট ছোট নিয়ম তৈরি করলে খরচ নিয়ে অপরাধবোধ বা সন্দেহ কমে যায়। যেমন- শৈশবে পরিবারের পক্ষে রেস্তোরাঁয় ‘অ্যাপেটাইজার’ কেনা সম্ভব ছিল না। তাই এখন নিজের একটি নিয়ম তৈরি করেছি— যে কোনো অ্যাপেটাইজার ভালো লাগলে কিনব, মূল্য নিয়ে দ্বিধা করব না। কারণ এটি আনন্দের একটি বড় উৎস।”
এক মাসের পরীক্ষামূলক পরিকল্পনা
সচেতন ব্যয় শুরু করতে চাইলে এক মাসের জন্য চেষ্টা করা যেতে পারে। মাস শেষে ব্যাংক বিবৃতি বা কোনো খরচ-ট্র্যাকিং অ্যাপ ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে বোঝা যাবে কীভাবে খরচ হল, কী কাজ করেছে, কী করেনি।
সেঠি বলেন, “প্রথমবারেই এটি নিখুঁতভাবে চলবে না। এটি এমন একটি পদ্ধতি, যা নিয়মিত পরিমার্জন করতে হবে। তবে ধীরে ধীরে বুঝতে পারবেন কীভাবে এটি আপনার জন্য কাজ করে এবং কোথায় পরিবর্তন দরকার।”
সচেতন ব্যয়ের উপকারিতা
১. অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো সম্ভব হয়।
২. যেসব ক্ষেত্রে আনন্দ পান সেখানে নির্দ্বিধায় খরচ করা যায়।
৩. সঞ্চয় ও বিনিয়োগের জন্য আলাদা অর্থ রাখা সহজ হয়।
৪. অপরাধবোধ ছাড়া ব্যয় করার স্বাধীনতা পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন
আপনার মতামত লিখুন :